সমস্যায় জর্জরিত কুবির দত্ত হল

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩, ০৪:৩১ পিএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলে দীর্ঘদিন সুপেয় পানির সংকট, ডাইনিং অব্যবস্থাপনা, বার্ষিক অনুষ্ঠান, হলের চারপাশ অপরিষ্কার এবং প্রভোস্ট অনুপস্থিতসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, গত দুই বছর যাবত সংকট রয়েছে সুপেয় পানি, ফলে ওয়াশরুমের ব্যবহারকৃত পানি খেয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর শঙ্কায় আছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, লোকবল থাকলেও তদারকির অভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা হয় না। পূর্বের প্রাধ্যক্ষকের সময় বিভিন্ন গাছপালা রোপণ করলেও তা এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক দিন থেকে দুইটি ব্লকে দুটি ওয়াশরুমের এবং ১০০৪ নাম্বার গণরুমের দরজা ভেঙে গিয়েছে, যা এখনও সংস্কার হয়নি। প্রতিটি তলায় পানির কল ও বেসিং নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া, ডাইনিং পরিচালনায় হল প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। সবসময় ডাইনিং চালু না থাকায় শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয় আশেপাশে টং দোকানগুলোতে যেখানে বেশি দামে অতি নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়। সেখানে, উচ্চমূল্য খাবারে প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ নেই।

কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সাম্প্রতিক একটি ব্লকে পানির পাইপ নষ্ট হওয়ার কারণে দুইদিন পানি ছিল না। প্রাধ্যক্ষ হলে অনুপস্থিতির কারণে দ্রুত সমাধান হচ্ছে না। হলে প্রভোস্ট না থাকে তাহলে দেখাশোনা কে করবেন? এছাড়া, হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাস্টবিন না থাকায় সবাই যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলছে। গত কয়েক বছর যাবত হলের কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদনের প্রয়োজন থাকলেও হল প্রশাসন এক্ষেত্রে উদাসীন। তাহলে হল প্রশাসনের কাজ কী? এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে হলে বেড়ে গেছে মাদকের আখড়া। আমরা এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখলাম না।

এ নিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থী রবি চন্দ্র দাস বলেন, আগে ডাইনিং ৮০ থেকে ১০০ জন হতো এখন প্রশাসনের পরিচালকের অভাবে ৩০ থেকে ৪০ জনও হয় না। যেখানে অন্যান্য হলের মিল রেট ৩৫ টাকা সেখানে আমাদের এখানে ৪০ টাকা। শিক্ষার্থীরা এত টাকা কোথায় থেকে দিবে। এছাড়া কয়েকবার হলের সমস্যা জন্য গিয়েও হলের প্রভোস্ট কে পাওয়া যায় না। আমরা কার কাছে গিয়ে অভিযোগ করব, যেখানে ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলে প্রতিবছর সাংস্কৃতিক আয়োজন হয় সেখানে আমাদের হলে তিন বছরেও একটা অনুষ্ঠানও হয় না।

আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী মোঃ রবিউল হোসেন বলেন, যেখানে হলের কর্মচারীরা প্রতিদিন পরিষ্কার করার কথা, সেখানে তারা মনে হয় সপ্তাহে একদিন আসে। হলের নিরাপত্তা কর্মীরা রাতে সময় ঘুমায় থাকে। ফলে যেকোনো সময় চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষরের জন্য এখানে আসলে তাদেরকে আবার ডিপার্টমেন্টে যেতে হয় অথবা হলের কর্মচারী ডিপার্টমেন্টে গিয়ে প্রাধ্যক্ষকের স্বাক্ষর নিয়ে আসে।

এসব বিষয়ে হল প্রভোস্ট ড. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমার কাছে এধরনের কোন অভিযোগ আসে নাই, যে অভিযোগটি আসছে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করতেছি, আর পানির জন্য একটা আবেদন করেছি। খুব দ্রুত সেটা বাস্তবায়ন হবে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগে প্রাধ্যক্ষ বলেন, আমি এখন ডরমিটরিতে বসে আপনার সাথে কথা বলতেছি। হল আর ডরমিটরি তো পাশাপাশি আমি এখন থেকে দেখতে পাচ্ছি হলের পূর্ব গেইট টা। আমি প্রতিদিন ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকি। শিক্ষার্থীরা আমাকে কেন পাবে না। মাদকের বিষয়ে আপনার কার্যক্রম কি? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমরা মাদক নিয়ে জিরো টলারেন্স করব। সাম্প্রতিক সময়ে দুইজনকে হল থেকে বের করে দিয়েছি।' কিন্তু সত্যতা যাচাই করার জন্য প্রতিবেদক নাম জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ প্রতিবেদককে তাদের নাম বলতে নারাজ।

হলে বার্ষিক অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা হলের ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে একটা টুর্নামেন্ট চালিয়েছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন থেকে কোন বাজেট না পাওয়ার কারণে আমরা কোন অনুষ্ঠানে পরিচালনা করতে পারছি না। কিন্তু অন্যদিকে দেখা যায় বিভিন্ন হলে নিয়মিত বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: