শেরপুরের দশআনী নদীতে সেতু না থাকায় ১০ গ্রামের মানুষের দূর্ভোগ

শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের দশআানী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চরা লের ১০ গ্রামের মানুষ। বছরের অর্ধেক সময় বাশের সাকো ও অর্ধেক সময় নৌকায় কৃষিপণ্য আনা নেয়াসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিবার ভোটের সময় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা।
জানা গেছে, ব্রক্ষপুত্র ও দশআনী নদীর বন্যা থেকে রক্ষা করতে কামারেরচর বাজার ঘেঁষে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ দেয়ার ফলে শেরপুর সদর উপজেলার ১নং কামারেরচর ইউনিয়নের ৬নং চর, ৬নং চর নতুনপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, নয়াপাড়া, ভাটিপাড়া, উজানপাড়া, কামারপাড়া, গোয়ালপাড়া, পয়েস্তীরচর জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
শেরপুর সদর উপজেলার থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে কামারেরচর ইউনিয়ন ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশআনী নদী। এই গ্রামগুলোর ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে দশআনী নদীর উপর বাঁশের ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো। এই অ লের মানুষ শুকনো মৌসুমে শত কষ্ট স্বীকার করে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। শুধু দুর্ভোগই নয় এই সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রীর স্কুল ও কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। বিশাল চরা লের শাক-সবজী, ধানসহ নানা ফসল আনা-নেয়াতেও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
ফলে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যও পায় না এই এলাকার কৃষকরা। বারবার নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে আর কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন না। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দশআনী নদী পারাপার করতে হয় শিশু কিশোর, ছাত্র, বৃদ্ধ সবাইকে। আবার অনেক সময় সঠিক সময় রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে মারা যায় অনেকেই। সময়মতো শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুলে। তাই এলাকাবাসী এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চান।
গোয়ালপাড়ার কৃষক মানু, পোয়াস্তির চরের কৃষক সুজন বলেন, আমাদের এই সেতুটি যে কবে হবে, আমরা জানিনা। জন্মের পর থেকেই এরকম দেখছি। সরকার সারা দেশেই উন্নয়ন করছে। অথচ আমাদের অল্প একটু সেতু করে দেয় না। খালি ভোটের সময় আসলে ভোট নেয়। সেতু না থাকায় সরাসরি ফসল বাজারে নিতে পারি না, তাই ফসলের ভালো দাম পাই না।
৬নং চরের মেহেদী হাসান পাপুল বলেন, আমরা সেতুর অভাবে সারাবছর দুর্ভোগের স্বীকার হই। আমাদের চরে প্রচুর সবজির আবাদ হয়। চরের এই সবজি সারাদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সেতুর অভাবে কৃষকরা সময়মত কোনো কিছু বাজারে নিতে পারে না। ফলে কৃষিপণ্যের প্রকৃত দাম পায় না কৃষকরা। সেতুটি নির্মাণ করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
৬নং চরের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, নদীর এপারে অনেক কৃষি পণ্যের আবাদ হয়। হাজার হাজার মণ বেগুন, পাট, গম, ধান নষ্ট হয়। কারণ যোগাযোগ ভালো না থাকায় পণ্য বাজারে তুলতে পারি না আমরা। তাই লাভবান হতে পারি না। আমরা সরকারের কাছে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানাই।
কামারের চর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরশ বলেন, শুকনা মৌসুমে আমরা এই বাশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাই। বর্ষার সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। অনেকসময় নদীতে বই খাতা পরে ভিজে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। ভয়ে একা নৌকা দিয়ে পার হতে পারি না। স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। মোঃ হানিফ বিএসসি বলেন, আমি অনেক বছর যাবত এই স্কুলে শিক্ষকতা করি। নদী পারাপারের জন্য আমাদের নানা ধরনের অসুবিধা হয়। দেখা যায় আমরা সময়মত স্কুলে যেতে পারি না। বর্ষার সময় নদী পার হওয়ার জন্য বসে থাকতে হয়। এই ৬নং চরের দশআনি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এই এলাকার যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে। এই নদীতে শুকনো সময় পন্য আনা নেয়ার একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি আর বর্ষার সময় নৌকা। তাও পন্য পারাপার করতে হয় অনকে ঝুঁকিতে। পণ্য পারাপারের সময় অনেক সময় মারাও পড়ে ঘোড়া।
সুমন মিয়া বলেন, শুকনা মৌসুমে আমরা অনেক কষ্ট করে গোড়ার গাড়ী করে মালামাল নদী দিয়ে পার করি। অনেক সময় ঘোড়া মাল নিয়ে আসার সময় পানির মধ্যে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। গত দুই বছরে আমার দুটি ঘোড়া মারা গেছে।
কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দশআনী নদীতে একটি সেতু নির্মাণ মানুষের প্রাণের দাবি। বিষয়টি স্থানীয় এমপিকে জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন।
শেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেরপুর সদরের দশআনী নদীতে সেতু তৈরির যাবতীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করা হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: