রমজান মাসে ১০ টাকা দরে দুধ বিক্রি করছেন এরশাদ

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৪ পিএম

পুরো রমজান মাসে কিশোরগঞ্জে ১০ টাকা দরে দুধ বিক্রি করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এরশাদ উদ্দিন। পবিত্র রমজান মাস এলেই অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা যেখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন, সেখানে ব্যতিক্রমী নজির স্থাপন করে চলেছেন শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন। রমজান উপলক্ষ্যে গরিবদের জন্য এবারও ১০ টাকা লিটার দরে তার খামারের সব দুধ বিক্রি করে দিয়েছেন। শুক্রবার প্রথম রমজান থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেছেন, শেষ রমজান পর্যন্ত চলেবে।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা এরশাদ উদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, তিন বছর আগে এরশাদ উদ্দিন নিজ এলাকায় জেসি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে দুগ্ধ ও মোটাতাজাকরণের ৪০০ গরু রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ২০টি গরু দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন খামার থেকে ৭০-৭৫ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে সব দুধ তিনি ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কেউ তার খামার থেকে নামমাত্র ১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন।

সরেজমিনে রমজানের প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে দেখা গেছে তার খামারে এলাকার দরিদ্র শতেক নারী-পুরুষ লাইন ধরেছেন। কেউ কেউ ১০ টাকায় আবার কেউ বিনা মূল্যে দুধ নিয়েছেন।

মুড়িকান্দি গ্রামের নঈম উদ্দিনের স্ত্রী রিনা লাইনে দাঁড়িয়েছেন দুধ নিতে। তিনি বলেন, ‘সারা বছর দুধ খাইতাম পারি না। রোজার মইধ্যে এরশাদ ভাই আমরার লাইগ্যে ১০ ট্যাহায় দুধ দেয়। তিন বছর ধরেই ১০ ট্যাহায় দুধ পাই। দুধ দিয়ে খায়া শান্তিমতো রোজা রাখতাম পারি। ’

একই গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী আসমা বলেন, ‘বাজারে দুধের যে দাম, আমরার মতো মানুষ দুধ খায়াম ক্যামনে? এরশাদ ভাই ১০ ট্যাহায় দুধ দেওয়ায় আমরা খাইতাম পারতাছি। ’

নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের মমতা বেগম ও করফুলা বেগম বলেন, বাজারে সবকিছুরই দাম অনেক বেশি। রমজানে ১০০ টাকা লিটার করে দুধ কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এরশাদ ভাই ১০ টাকা করে দুধ দিচ্ছেন, এই দুধ দিয়েই আমরা সেহরি খাব।

রৌহা গ্রামের হারেস উদ্দিন ও কামাল মিয়া বলেন, এরশাদ সাহেব আমাদের জন্য ১০ টাকা করে এক লিটার দুধ দিচ্ছেন। আমরা অনেক খুশি। কেননা বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব না।

মোহাম্মদ ইমরান নামে একজন বলেন, এরশাদ ভাইয়ের এ মানবিক উদ্যোগ আমাদের উপজেলায় প্রশংসিত হয়েছে। তিনি সবসময়ই এমন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন।

বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন বলেন, রমজান এলেই এলাকায় দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। হাটবাজারগুলোতে এক লিটার দুধ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। ১০০ টাকা দিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষদের কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নেই। এ বিষয়টা চিন্তা করেই তাদের জন্য নামমাত্র ১০ টাকা বা ১ টাকা মূল্যে প্রতিদিন ৭০ জনকে ১ লিটার করে দুধ দেওয়া শুরু করেছি। এছাড়া অনেককে বিনা মূল্যেও দুধ দিয়েছি। আজ প্রথম রমজান থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে।

তিনি আরও বলেন, পুরো রমজানে আমার খামারে যা দুধ উৎপাদন হবে সবই ১০ টা বা ১ টাকা করে বিক্রি করা হবে। সেই হিসেবে এই রমজানে ২ মেট্রিক টন দুধ বিক্রি করা হবে।

তিন বছর ধরেই এভাবে বিক্রি করছেন। তবে অতি দরিদ্র কেউ টাকা ছাড়া এলেও খালি হাতে ফিরছে না। বোতলে ভরে দুধ নিতে পেরে তৃপ্তির হাসি হাসছেন তারা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: