‘ওসির বিদ্বেষমূলক আচরণে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে’

কোলে দুগ্ধপোষ্য ছয় মাসের শিশু সন্তান ও দুই বছরের আরেক শিশু সন্তান নিয়ে হাজতের ভেতরে নির্বাক দাড়িয়ে আছে এক নারী। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় তোলপাড়। এরপর থেকে কক্সবাজারের নবগঠিত উপজেলার ঈদগাঁও থানা পুলিশের নানা বির্তকিত কর্মকান্ডের অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা।
শুধু তাই নয়, গত ২১ মার্চ রাতে সাদা পোশাকের ৭ পুলিশ সদস্য বাজারের চাঁদাবাজি কালে পথচারী এক এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রতিবাদ করে। এক পর্যায়ে তারা দলবদ্ধ হয়ে ঐ স্কুল ছাত্রের উপর হামলা করে আহত করে। এ দুইটি ঘটনায় নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফুঁসে উঠেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।
তারা ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম কবিরের প্রত্যাহার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। এতে অংশ গ্রহণ করেন স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষ।
এই দুটি ঘটনিকে কেন্দ্র করে ফুঁসে উঠেছেন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, ঈদগাঁও থানার ওসি গোলাম কবির যোগদানের পর থেকে ঘুষবানিজ্য, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, দালাল শ্রেণির লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ, বাজার কমিটি, সমাজ সর্দার ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়হীনতার কারনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এমতাবস্থায় স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের সাথে জরুরি বৈঠকে বসেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ বৈঠকটি হয় বলে নিশ্চিত করেন জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ।
তিনি জানান, ওসি গোলাম কবির ঈদগাঁও থানায় যোগদানের পর থেকে ৫ ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় না করে ইচ্ছে মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে। কোনো ওসি থানায় যোগদানের পর এলাকার জনপ্রতিনিধি, সমাজ প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠন, ইমাম, পৌরহিত্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভা করে সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কাজ করার রেওয়াজ রয়েছে।
কিন্তু এই ওসি গোলাম কবির ঈদগাঁও থানায় যোগদানের পর থেকে কারো সাথে সমন্বয় সাধন না করে গুটি কয়েক দালালের মাধ্যমে ঈদগাঁওয়ের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। তিনি (ওসি গোলাম কবির) পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদকে কোমরে রসি বেঁধে থানায় ধরে আনারও নির্দেশ দিয়েছিল একজন এসআইকে। তাছাড়া কক্সবাজারের প্রবীণ রাজনীতিবীদ সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীকে নিয়েও ব্যঙ্গ করে বেফাঁস মন্তব্য করেছিল।
চেয়াারম্যান রাশেদ আরো বলেন, থানায় যোগদানের পর থেকে একের পর এক হত্যাকান্ড, মাদকের ছড়াছড়ি, ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, নির্বাচনী একটি মামলায় তিনি অভিযুক্ত ছিলেন, অজ্ঞাত কারণে মামলাটি ওয়ারেন্ট হয়। জানতে পেরে বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নেওয়া হয়। পরে জামিননামা (রিকল) থানায় না পৌছায় একজন এসআই পাঠিয়ে কোমরে রসি বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুংকার দেয় এ ওসি।
তিনি আরেও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন আইনশৃংখলা কমিটির সভাপতি, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও তিনি একটি বারও আইনশৃংখলা কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা করেনি। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জনপ্রতিনিধি -পুলিশ পরস্পর ভাই ভাই। সবাই মিলেমিশে এলাকার আইনশৃঙ্খলা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা, সেখানে ওসি কারো সাথে কোনো ধরনের সমন্বয় সাধন না করে একতরফা ভাবে চলে। এভাবেই দূরত্ব সৃষ্টি হলে আইনশৃংখলা পরিস্থতির নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব না।
স্থানীয়দের দাবি, ওসি গোলাম কবির ৫ মাস পূর্বে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে একের পর এক অপরাধ সংগঠিত হয়ে আসছে ঈদগাঁওতে। বিভিন্ন মামলার আসামীদের সাথে সংখ্যতা গড়ে তুলে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
দায়িত্ব পালনে ব্যাপক ব্যর্থতা রয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, থানা হাজতের ভেতর দুগ্ধপোষ্য শিশু কোলে ও অপর শিশুকে সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঈদগাঁও থানা পুলিশের অমানবিক এ কাণ্ড প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় অভিযান চালানো এসআইকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসপি।
জরুরি বৈঠকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের মৌখিক অভিযোগ শুনেন। পরবর্তীতে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ, পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ, ইসলামপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আলম, ঈদগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি তারেক আজিজ, জালালাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম মোর্শেদ ফরাজী, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান চৌধুরী, জালালাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঈদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেল উদ্দিন রাশেদ, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ভট পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ডাকা হয়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক করা হয়। বৈঠকে চেয়ারম্যান, রাজনীতিবীদরা ওসির বিষয়ে নানান অভিযোগ তুলে ধরে ধরেন। সবকটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। ওসির সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে সমন্বয় না থাকার বিষয়টি ইতিপূর্বে বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি অবগত হয়েছে।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা সমাজের একটি অংশ, পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ শ্লোগানকে ধারণ করে সবার সাথে সমন্বয় সাধন করে চলতে হবে পুলিশকে৷ চেয়ারম্যানরা ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি, তাদের সাথে ওসির দূরত্ব সৃষ্টি হলে কোনোভাবেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতারা বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: