‘ওমরাহ করতে যাব, দোয়া কইরো’, মাকে বলেছিলেন নাজমুল

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৬:০১ পিএম

‘আমার সোনা মানিক কত নামাজি কত ভালো ছিল। সারাদিন কাজকর্মের মধ্যেও নামাজ পড়ত। গত সোমবার সে আমারে ফোন করে বলে, মা আমি ১০ দিনের ছুটি পাইছি, আমি ওমরাহ করতে যাব। তুমি দোয়া কইরো আমার জন্য। কিন্তু আমার মানিক ওমরাহ করতে পারল না। তার আগেই বাস দুর্ঘটনায় ছেলেটা মারা গেল।’ বাড়ির উঠানে বসে বুক চাপড়িয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলাম ওরফে নাজমুলের (২৮) মা খাদিজা বেগম।

নিহত নাজমুলের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ঘুণী গ্রামে। বছর খানেক আগে পারিবারকে একটু স্বাবলম্বী করতে সৌদি আরবে পাড়ি দেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা নাজমুল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গত সোমবার (২৭ মার্চ) কর্মস্থল থেকে মক্কাতে ওমরাহ পালন করতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। নাজমুলে মৃত্যুতে গোটা এলাকা যেন শোকের চাদরে মোড়া। বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নাজমুলের মা-বাবা, ভাই বোন, স্ত্রীসহ গোটা স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি আর্তনাদ।

নিহত নাজমুলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাজমুল সাত ভাই-বোনের মধ্যে পঞ্চম। সৌদি আরবের আভা কামিম শহরের একটি রেস্তোরাঁতে ওয়েটার হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে গত ২৭ মার্চ সোমবার দিবাগত রাতে একটি বাসে ওমরাহর উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কা যাওয়ার পথে আবহা এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাদের বাসটি। বাসটিতে ৪৭ জন যাত্রী ছিল। একটি সেতুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে মারা যায় ২২ জন যাত্রী। নাজমুলের সঙ্গে দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেজান

নাজমুলের খাদিজা বেগম জানান, আমি যখন সোমবার তারাবির নামাজ পড়ি তখনই হঠাৎ করে ফোন আসলো। নামাজের মধ্যেই ভাবলাম, ঐ মনে হয় আমার নামজুল ফোন দিয়েছে। তবে নাজমুল না! তার এক সহকর্মী ফোন দিয়েছে। ফোনটা আমার বড়ছেলে ধরেছিল। ধরেই অপর প্রান্ত থেকে কথা আসলো নাজমুলের বাসে আগুন লেগেছে। নাজমুল মারা গেছে। নাজমুলের বাবা কাওসার মোল্লা কান্নাস্বরে বলেন, আমার অন্য সন্তানদের চেয়ে নাজমুল শান্ত প্রকৃতির। বিদেশ যাওয়ার কয়েক মাস আগে বিয়ে করেছিলো। বউ রেখে সংসারের হাল ধরবে, নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই বিদেশ গেছিল। আমার সেই ছেলেটা এভাবে চলে যাবে কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।

নাজমুলের বড়ভাই কামরুল ইসলাম জানান, প্রায় নতুন বউ রেখে বিদেশ গেছিলো নাজমুল। ওর কোন সন্তান হয়নি। আমাদের সন্তানদের নিয়েই ওর ভাবনা চিন্তা ছিল। আমাদের ছেলে মেয়েদের যত আবদার ছিলো সব নাজমুলই পূরণ করতো। ও কত স্বপ্ন ছিলো, এক দুঘুর্টনায় দুঃস্বপ্ন রুপ দিয়েছে"। নাজমুলের চাচা আবুল কালাম বলেন, আমাদের ভাইপোর মৃত্যুতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। নাজমুলের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। তার মরদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালে রয়েছে। আজ ডিএনএ টেষ্ট হয়েছে। আমরাও সরকারিভাবে যোগাযোগ করছি দ্রুত নাজমুলের মরদেহ দেশে আনতে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: