ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হলেও আসামিরা অধরা

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৩, ০২:২৮ পিএম

গ্রামের একটি নির্জন বাড়িতে বান্ধবীর সাথে বেড়াতে এসে এক স্কুল ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কলিঙ্গা গ্রামে। ঘটনার রাতেই অভিযোগ হলেও দুইদিন পর ধর্ষণের পরিবর্তে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে। ধর্ষণের আলামত খুঁজতে ঘটনার তিন দিন পর নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও ৭দিনেও মেলেনি রিপোর্ট। পরিবারের দাবি, ঘটনার দিনই মীমাংসার জন্য ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিয়ের নাটক করে কালক্ষেপণ করেছে ধর্ষকের পক্ষ নেওয়া স্থানীয় প্রভাবশালীরা। পুলিশ বলছে নির্যাতিতা প্রথমে ধর্ষণ চেষ্টার কথা জানালেও এখন বলছে ধর্ষণ। তাই ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণ না পেলে ধর্ষণ মামলা হবে না। তারপরও দায়েরকৃত মামলায় আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রীর স্বজনরা জানায়,বড়াইল শেখপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে মো: রাব্বিউল নামের এক যুবক ধর্ষণ করলেও তার স্কুলের বান্ধবী সহ ধর্ষণে সহযোগীতা করে আরও চার জন। ঘটনার দুইদিন পর মামলা হয়েছে ধর্ষণ চেষ্টার। আর ধর্ষক রাব্বিউল ও বাড়ির মালিকের ছেলে সুমন সহ আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাত দু’জনকে। অথচ খালার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে স্কুল থেকে ডেকে আনা তার বান্ধবীকে আসামী করা হয়নি। ঘটনার পর ধামাচাপা দিতে ৫লাখ টাকা দেনমোহরে নির্যাতিতার সাথে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ধর্ষকের পক্ষ নেওয়া প্রভাবশালীরা নির্যাতিতার স্বজনদের সাথে দেন-দরবারও করেছে। এমনকি মিডিয়ায় প্রকাশ না করার জন্য প্রভাবশালী মহল ধর্ষকসহ চার আসামীর অভিভাবকদের নিয়ে স্থানীয় দু’জন সংবাদকর্মীকে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছে। ফলে পত্রিকায় এ নিয়ে রিপোর্টও হয়নি।

এলাকাবাসী ও মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, ক্ষেতলালের একটি মাধ্যমিক নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ক্ষেতলালের নিশ্চিন্তা গ্রামের আ: রহিমের মেয়ে মোছা: রিয়া বেগম গত ২২ মার্চ দুপুরে তার প্রেমিক কলিঙ্গা গ্রামের সুমনের বাড়িতে দেখা করতে যায়। এ সময় খালার বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রীকে সাথে নিয়ে যায়। সুমন তাদের গেট খুলে বাড়িতে নিয়ে নির্যাতিত ওই স্কুল ছাত্রীকে আলাদা কক্ষে বসে রেখে রিয়াকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে যায়। তাদের আগমনের বিষয়টি জেনে সুমন ধর্ষক রাব্বিউল সহ তার আরো দুই বন্ধুকে খবর দেয়। কিছুক্ষণ পর ওই বাড়িতে সুমনের তিন বন্ধু নির্যাতিত স্কুল ছাত্রীর ঘরে ঢোকে।

এ সময় জোরপূর্ব্বক বিবস্ত্র করে ওই ছাত্রীকে আসামী রাব্বিউল ধর্ষণ করলে তার চিৎকারে অন্য দুজন সহ ধর্ষক পালিয়ে যায়। বিকেলে বাড়ি এসে নির্যাতিতা ছাত্রী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। পরে সুমন সহ তাদের অভিভাবকরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেয়ার কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মীমাংসা না হওয়ায় ২২মার্চ রাতেই নির্যাতিতার মা থানায় অভিযোগ দেয়। অভিযোগ পেয়েও মামলা না নিয়ে পুলিশ কালক্ষেপন করে। পরে ২৪ মার্চ শুক্রবার রাব্বিউল ও সুমন সহ অজ্ঞাত দুই জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়। কিন্তু নির্যাতিতা ধর্ষণের দাবি জানালে মামলার পরের দিন ২৫ মার্চ শনিবার জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। তবে পরীক্ষার পর ৭দিন অতিবাহিত হলেও রিপোর্ট থানায় জমা হয়নি।

জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: মো: শহীদ হোসেন বলেন,‘নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা গত ২৫ মার্চ সম্পন্ন হলেও আরো কিছু পরীক্ষা বাকী আছে। যেগুলো সম্পন্ন করতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্য রিপোর্ট দিতে বিলম্ব ঘটছে। নির্যাতিতার দাদি বলেন,‘গত ২৪ মার্চ দুপুরে কলিঙ্গা গ্রামে তার নাতনিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওইদিন বিকেলে বাড়ি এসে সে কান্নাকাটি করলে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। পরে ধর্ষকের পক্ষ নেওয়া প্রভাবশালীরা ৫ লক্ষ টাকা দেন মোহরে বিয়ের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় রাতেই মেয়ের মা থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগের দুইদিন পর থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়।

নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রীর মা বলেন, ‘ঘটনার দিনই অভিযোগ দিয়েছি। তারপর আজ পর্যন্ত পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ‘আমরা গরীব মানুষ। আমাদের কেউ নেই। আমার মেয়েকে যারা নির্যাতন করেছে আমি তার সুষ্ঠ বিচার চাই’।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ক্ষেতলাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লতিফর রহমান বলেন,‘স্কুল ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গত ২৫ মার্চ জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: