রমজানে একজন রোজাদারের যেসব গুণ থাকা অবশ্যক

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম

মাহে রমজান মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাস আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস; প্রস্তুতিগ্রহণ ও তাকওয়া অর্জনের মাস। ক্ষমালাভের অগাধ সুযোগ রয়েছে এ মাসে। রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন- যা পরবর্তী সময়ে তার যাপিত জীবনে একটি উত্তম চরিত্রের মানুষ হিসেবে মর্যাদা দান করে।

আমাদের পূর্বসূরিরা ইবাদত বন্দেগির জন্য, মহান রবের সান্নিধ্য অর্জনের জন্য পবিত্র রমজানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। রমজানের প্রতীক্ষায় তারা  দিন গণনা করতেন। অন্য মাসগুলোর তুলনায় এ মাসের কিছু বৈশিষ্ট্য ও আলাদা মর্যাদা রয়েছে। কেননা এই মাসেই মানুষের জন্য জীবন বিধান হিসেবে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। পবিত্র রমজানে একজন রোজাদার যেসব গুনগুলো অর্জন করবেন তাই আজকের আলোচনা বিষয়বস্তু।

তাকওয়া অর্জন

রোজার প্রধান শিক্ষা তাকওয়া অবলম্বন করা। তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা ও ভয় করা। পরিভাষায়- মহান আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও পাপাচার হতে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলে। আর দীর্ঘ এক মাস প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বান্দাকে তাকওয়া অবলম্বন করার যোগ্যতা তৈরি করেন মহান আল্লাহ তায়ালা। সিয়াম ফরজ করার উদ্দেশ্যও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: আয়াত- ১৮৩)

বিশুদ্ধ কোরআন শিক্ষার মাস রমজান

বরকতময় রমজান কোরআন নাজিলের মাস। মাসটি কোরআন শেখার জন্য বিশেষ সহায়ক। রমজানে কোরআনের সঙ্গে তৈরি হোক স্থায়ী সম্পর্ক। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক যেন রমজান কেন্দ্রিক না হয়। রমজানে কোনো ইসলামিক স্কলার কিংবা কোনো ব্যক্তির উপদেশ যেন এমন না হয় যে,- ‘কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারলে বা না জানলে ‘কুল হুওয়াল্লাহ’ সুরা বা ‘সুরা ইখলাস’ কিংবা কোনো দোয়া-জিকিরের অজিফা দুই শত বার কিংবা চার শত বার পড়ুন!’

সহমর্মিতা

মহানবী (সা:) রমজান মাসকে ‘সহমর্মিতার মাস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। দীর্ঘদিন রোজা রাখার কারণে রোজাদারের মধ্যে দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত হয়। সহমর্মিতা জ্ঞাপন করার জন্য মহানবী (সা:) রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা:) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজান মাসে তিনি আরও অধিক দানশীল হয়ে ওঠতেন...’ (সহি বুখারী: ৬)।

ধৈর্যধারণ

হাদিসে রমজান মাসকে ‘ধৈর্যের মাস’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। রোজাদারের সামনে সুস্বাদু খাবার থাকলেও তিনি আহার করেন না, রূপসী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সহবাস করেন না। এমনকি আচার-আচরণেও ধৈর্যধারণ করেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার’ (বুখারি: ১৯০৪)।

ইখলাস

রোজা এমন একটি ইবাদত, যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই পালন করা হয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে পানাহার ও যৌনাচার করার সুযোগ পরিহার করেই রোজা রাখেন একজন রোজাদার। এজন্যই হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু রোজা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব।’ (সহি বুখারী: ১৯০৪)।

ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব

রমজানে ধনী-গরীব, সাদা-কালো একসঙ্গে তারাবির নামাজ, একই দস্তরখানে সম্মিলিতভাবে ইফতার করা এবং জাকাত ও সদকাতুল ফিতর প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। এই ভ্রাতৃত্ববোধ মুসলমানদের প্রতি সৃষ্টিকর্তার একান্ত অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: