বাগাতিপাড়ায় গাছে গাছে ঝুলছে পোশাক পরা আম

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩, ০৫:০০ পিএম

মো. আবদুল্লাহ-আল-অনিক, বাগাতিপাড়া (নাটোর) থেকে: নাটোররে বাগাতিপাড়ায় গাছে গাছে ঝুলছে ব্যাগ আর তার মধ্যেই সুরক্ষিত পুষ্ট আকর্ষণীয় বিভিন্ন জাতের আম। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্রুট ব্যাগিং। বাহিরের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়, বিরুপ আবহাওয়া কিংবা কোন ক্ষতিকারক প্রভাবই এই ব্যাগের মধ্যে প্রবেশ করে আমের কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।

গাছে গাছে দু’চারটা নয় হাজার হাজার ব্যাগ ঝুলছে। এগুলো হলো ফ্রুট ব্যাগিং।তবে যদি কেউ প্রথম এই পদ্ধতি লক্ষ করে তবে তার কাছে মনে হতে পারে আমগাছে বাবুই পাখির বাসা। এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না মৌসুমী চাষীরা।সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে। উৎপাদিত ফল রপ্তানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে চিরাচরিত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে চাষীরা বেছে নিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। এই ফ্রুট ব্যাগিং আম বিদেশেও রপ্তানি হয়।গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শ ও তত্ত্বাবধায়নে উপজেলা জুড়ে শুরু হয় ফলের ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। এরপর থেকে এ পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করায় দিন দিন তা জনপ্রিয় হচ্ছে ।

আমচাষী উপজেলার জামনগর ইউনিয়নেরহাপানিয়া এলাকার মন্টু আলী বলেন, এবার তাঁর ৫ বিঘা জমির বাগানে রয়েছে ফজলি এবং আশ্বিনা জাতের আম। সরেজমিনে তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে বাদামী রং এর কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। প্রতিটি গাছের আম কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে।তিনি নিরাপদ আম সংরক্ষণের ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে মজা করে বলেন, পোশাক পরেছে তাঁর বাগানের আম। এক-একটা ব্যাগ খুলে দেখান। সতেজ সবুজ ও পরিষ্কার আম। আমের গায়ে দাগ নেই। ধুলা ও পোকামাকড় নেই, নেই
রোগবালাইও।

আজগর মোড় এলাকার আরেক আম চাষী বাক্কার আলী বলেন, ‘গত বছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এবছর ৩ বিঘা জমিতে আমরুপালি ও আশ্বিনা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করছি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আমের চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাহিরে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে। সলইপাড়া এলাকার অরেকজন ফ্রুট ব্যাগিং করা আম চাষী বলেন, এই পদ্ধত্তিতে আমগুলি ব্যাগের ভিতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এই পদ্ধতিতে আম নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ফলনও বৃদ্ধি পায়। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশাও করেন তিনি। তার মতো এখন উপজেলার বেশ কিছু আমচাষী ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করছেন। তবে চাহিদা বাড়ায় ফ্রুট ব্যাগের দাম বেড়ে গেছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, উপজেলায় দিন দিন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এবছর উপজেলায় ১৭ হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ হাজার ফ্রুট ব্যাগ সরকারী সহয়তায় প্রদান করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই পদ্ধতির ফলে মাছি-পোকা আম নষ্ট করতে পারে না।
তাছাড়া আম দেখতে সুন্দর এবং ফলনও বৃদ্ধি পায়।বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে
ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের
সব রকম পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: