
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বিয়ের দাবীতে পরকীয়া প্রেমিকের বাড়ীতে টানা ৬ দিন ধরে অবস্থান করছেন এক গৃহবধু প্রেমিকা (২৭)। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং গৃহবধু প্রেমিকাকে এক নজর দেখতে ভির করছে শতশত নারী-পুরষ। বুধবার ১৯ জুলাই সকালে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গজেরকুটি বানিয়াটারী এলাকায় প্রেমিক বিকাশ চন্দ্র রায়ের শয়ন ঘরে তাকে অবস্থান করতে দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের অজয় চন্দ্র রায় (বিদেশী)'র অনার্স পড়ুয়া ছেলে বিকাশ চন্দ্র চন্দ্রের (২৯) সাথে একই এলাকার ফুবাতো ভাই সুবোধ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী এক সন্তানের জননী গৃহবধু (২৭) প্রায় সাড়ে সাত বছর ধরে পরকীয়া প্রেম ভালবাসা চলছিল। পরকীয় প্রেমের টানে প্রেমিক বিকাশ চন্দ্র রায় গৃহবধু প্রেমিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রতি দিয়ে টানা সাড়ে সাত বছর ধরে গৃহবধুর বাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় দৈহিক মেলা মেশা করে আসছে। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিকাশ চন্দ্র রায় স্বামীর অনুপস্থিতিতে ওই গৃহবধু প্রেমিকার ঘরে ঢুকেন। সেখানে আপত্তিকর অবস্থায় পরিবারের লোকজন তাকে আটক করে। এক পর্যায়ে প্রেমিক বিকাশ কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরের দিন শুক্রবার গৃহবধুর স্বামী সুবোধ চন্দ্র রায় রংপুরে কর্মস্থল থেকে বাড়ীতে ফিরে ঘটনা শুনে স্ত্রীকে বাড়ী থেকে চলে যাওয়ার কথা বলে এবং তোমার মত স্ত্রীকে নিয়ে আর কোন প্রকার সংসার করবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে গৃহবধু উপায়ন্তর না দেখে শুক্রবার ১৪ জুলাই দুপুরে স্বামী-সন্তান ও সংসারের মায়া ত্যাগ করে দেবর বিকাশ চন্দ্র রায়ের বাড়ীতে বিয়ের দাবীতে অবস্থান নেয়। এদিকে পরকীয়া প্রেমিকা ভাবির অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়ী থেকে সটকে পড়ে প্রেমিক দেবর বিকাশ।
প্রেমিকের বাড়ীতে অবস্থানরত গৃহবধু জানান, আট বছর আগে সুবোধের সাথে আমার বিয়ে হয়। আমার স্বামী জীবন-জীবিকার তাগিদে রংপুরে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিয়ের ৬ থেকে ৭ মাস পর আমার স্বামীর মামাত ভাই বিকাশ আমাকে বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে টানা সাড়ে সাত বছর ধরে আমার সাথে দৈহিক মেলামেশা করে। তখন থেকে প্রায়ই সে আমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে আমার সাথে দৈহিক মেলামেশা করতো। গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার শ্বাশুড়ী ও বাড়ীর লোকজন তাকে আমার ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। আমার স্বামী বিষয়টি জানার পর বাড়ীতে এসে আমাকে নিয়ে আর কোন দিন সংসার করবে না বলে সাফ সাফ জানিয়ে অথ্য ভাষায় গালি দেন এবং এই মুহুর্তে বাড়ী থেকে চলে যাও। তোমার মত স্ত্রীর মূখ যেন আর না দেখি। প্রেমিক বিকাশের কারণে যখন আমার স্বামীর সংসারে ঠাই হলো না, তখন আমি বাধ্য মামা শ্বশুড়ের ছেলে প্রেমিক বিকাশ বাড়ীতে বিয়ের দাবীতে অবস্থান নেই। বিকাশ আমাকে বিয়ে না করলে আতœহত্যা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।
স্থানীয় বুলবুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায়, সুমন্ত চন্দ্র রায় জানান,ওই গৃহবধুর সঙ্গে বিকাশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমরা চাই ওই গৃহবধুর যেন বিকাশের সাথে বিয়ে হয়। তা না হলে ওই গৃহবধু ন্যায় বিচার থেকে বি ত হবে। পূর্বের স্বামী তাকে আর গ্রহন করবে না।
এ বিষয়ে প্রেমিক বিকাশ চন্দ্র রায়ের সাথে মুঠো-ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিয়েতে রাজি থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও এখন পরিবারের চাপে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্ম গোপনে আছেন। তবে প্রেমিক বিকাশের মা জানান, গৃহবধু সম্পর্কে আমার ভাগিনা বউ। সে আমাদের বাড়ীতে ৬ দিন ধরে আছে। আমার ছেলে বাড়ীতে নাই। তাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে কি না জানি না।
গৃহবুধর স্বামী সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, আমার মা যেখানে আমার স্ত্রী ও মামাতো ভাই বিকাশসহ আপত্তিকর দেখে ফেলে এবং মা বিকাশকে আটক করলেও টানা হেচড়া করে কৌশলে পালিয়ে যায়। এখন আমার স্ত্রী বলছে যে আমার অজান্তে বিকাশের সাথে সাড়ে ৭ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী করে দৈহিক মেলামেশা করতো। এই ঘটনাটি এখন এলাকায় প্রতিটি মানুষের মূখে মূখে বিস্তার করছে। তাই আমার মৃত্যৃ হলেও ওই বউকে কোন কালেই সংসার করবো না বলে সাফ জানিয়ে দেন সুবোধ।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন চন্দ্র রায় জানান, ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থল গিয়ে প্রথমে পূর্বের স্বামীর বাড়ীর লোকজনদের যায়। সেখানে ওই গৃহবধূকে ফেরত নেওয়ার জন্য বলা হলে তারা কোন ক্রমেই তাকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানান। পরে গৃহবধূ যে বাড়ীতে অবস্থান সেখানে গেলে ওই গৃহবধূ বিকাশকে বিয়ে না করা পর্যন্ত ওই বাড়ীতে অবস্থান করবে। তবে এর সমাধান ওই যদি গৃহবধূ পূর্বের স্বামী ঘরে যায়। অথবা বিকাশকে বিয়ে করে তাহলে এলাকারসহ দুই পরিবারের মাঝে শান্তি আসবে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটির সাথে আমি কথা বলেছি। সে বলেছে, বিকাশ আমাকে বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করবো। আমরা ছেলে ও তার পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। মনে হয় সমাধান হবে। তারপরেও বিষয়টি ফুলবাড়ী থানায় অবগত করা হয়েছে।
এ ব্যাপার ফুলবাড়ী অফিসার ইনচার্জ প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ জানান, বিষয়টি ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাও জানিয়েছে। গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ খবর