
বড়ো শখ ছিল কক্সবাজার-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হবেন, করবেন তৃণমূলের প্রচুর কাজ। তাই সংসদ সদস্য হতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আ.লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন তো পান-ই নি, উপরন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটিও হারিয়ে শেষে ‘আম ছালা’ সবই হারালেন তিনি।
ঘটনাটি কক্সবাজারের রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজলের।
জানা গেছে, কক্সবাজার-৩ আসন থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল। তার জনমতও ভালো ছিল। নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে আসছিলেন তিনি।
সূত্র মতে, দল থেকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে তাঁর পাশাপাশি বর্তমান সাংসদসহ আরও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আশ্বাস দেয় দলটি। নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী এরই মধ্যে কাজল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন জোটেনি কাজলের ভাগ্যে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলই পান চূড়ান্ত মনোনয়ন। এ কারণে নৌকার কান্ডারী তো হতেই পারেননি, উপরন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটিও হারাতে হয় কাজলকে।
কাজলের অনুসারীরা বলেন, এলাকার মানুষ কাজলকে পছন্দ করেন। তাদের চাপে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নৌকার সাংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেন নি তিনি। কারণ ওই পদে থেকে তৃণমূলের কাজ তেমন করা সম্ভব হয় না। করার সুযোগও নেই। তাই দলীয়ভাবে সংসদ সদস্য পদে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
কাজল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দলের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন আমাকে বঞ্চিত করা হলো কেন তা দলের হাই কমান্ডই ভালো বলতে পারবেন।’
দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর জমা দিয়েছেন তিন ভাইবোন। তাঁরা হলেন- আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, তাঁর বড় ভাই ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং তাঁদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। এই তিনজন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য ওসমান সরওয়ার আলমের সন্তান।
২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সোহেল সরওয়ার। ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ ৫ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪ মাস আগে অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন।
এক পরিবারের হলেও কক্সবাজারের রাজনীতিতে তাঁরা একে অপরের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনজনই দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে তৎপরতা চালিয়েছিলেন।
এদিকে তিন ভাইবোন ছাড়াও কক্সবাজার-৩ আসনে এ পর্যন্ত দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আরও আটজন নেতা। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান, বর্তমান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ, কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি রণজিত দাশ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিজান সাঈদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী।
সর্বশেষ খবর