
চলে গেলেন ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও সাহিত্যিক আলোকিত কবি আসাদ বিন হাফিজ।
রোববার (৩০ জুন) রাত ১২ টা ৫৫ মিনিটে রাজধানী ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
সোমবার (১জুলাই) বাদ যোহর রাজধানীর বায়তুল মোকারমে ১ম এবং বাদ আছর কবির গ্রামের বাড়ি বড়গাঁওয়ে ২য় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে কবিকে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ১ মেয়ে, অগণিত পাঠক এবং শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৫৮ সনের ১লা জানুয়ারি গাজীপুর কালীগঞ্জের বড়গাঁও এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। কবি ফররুখ আহমেদের অনুসারী কবি আসাদ বিন হাফিজ ছোটবেলা থেকেই ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তার সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অনুপ্রেরণা প্রকাশ করেছেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা চেতনার ও প্রকাশ ঘটেছে। তিনি ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।
শৈশবে কবি আসাদ বিন হাফিজ নিজ গ্রাম বড়গাঁও প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং বাড়ির পাশের মক্তবে আরবি শেখেন। কোভিড বড় ভাই হাফেজ মোহাম্মদ ইউনুস বিক্রমপুরে মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতেন। কবি শৈশবেই ভাইয়ের সাথে সেখানে চলে যান এবং সেখানে সহিহ কোরআন তেলাওয়াত শিখেন। এরপর তিনি আবার গ্রামে ফিরে আসেন। বাড়ি ফিরে পার্শ্ববর্তী গ্রাম সাওড়ায় প্রাইমারি ও হাইস্কুলে ভর্তি হন। কবির সবচেয়ে বড় ভাই অধ্যাপক ইউসুফ আলী তখন নরসিংদী কলেজে অধ্যাপনা করতেন। কবি সেখানে গিয়ে ব্রাহ্মনদী কলেজিয়েট হাইস্কুলে ভর্তি হন। কিছুদিন লেখাপড়ার পর দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বড় ভাইয়ের সাথে ঢাকায় চলে আসেন এবং তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ফরিদাবাদ হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই তিনি মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ করেন ১৯৭৪ সালে। কবি কলেজ জীবন শুরু করেন টাঙ্গাইল খালি হাতে ভন্ডস্বরে আলাউদ্দিন সিদ্দিকী কলেজ থেকে। পরে কলেজ পরিবর্তন করে ঢাকা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
কবি আসাদ বিন হাফিজ কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সব শাখাতেই রেখেছেন তার অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর তিনি প্রায় ৮১ টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ "কি দেখো দাঁড়িয়ে একা সুহাসিনী ভোর" এবং "অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার"।
কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ কলম সেনা পুরস্কার (১৯৯৪), কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এমইউ আহমেদ পুরস্কার (১৯৯৭), বাংলাদেশ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার (১৯৯৭), ছড়ার ডাক পদক ও সম্মাননা (২০০৪), মেলোডি শিল্প গোষ্ঠী পদক (২০০৪), কিশোর কণ্ঠ ও সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪), গাজীপুর সংস্কৃতি পরিষদ কৃতি সংবর্ধনা (২০০৪) মরহুম ওমর ফারুক সম্মাননা স্মারক 'কাব্যগ্রন্থ' -২০১৬ বাসাসপ প্রবর্তিত, এবং সাহিত্যচর্চা সম্মাননাসহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর