
ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাথে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মডেল থানার ঘাটারচর এলাকার অনুকূলে পরিণত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়াসহ নেতাদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অর্ধশতাধিক সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
রবিবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন এই ঘাটার চর এলাকায় গত ১৯ জুলাই কোটা আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও গণ অসহযোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আঁটি ভাওয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে বড় মনোহরিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদের মিছিলের ওপর পেছন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে। এতে মুহূর্তেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র ভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা সংঘটিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে নেতাকর্মীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানপাটের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এ সময় মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু সিদ্দিক ও তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক অবরুদ্ধ হন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছয়টি মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এছাড়া এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়।
এর কিছুক্ষণ পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুনরায় সংঘটিত হয়ে আবারো ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ শুরু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘাটার চর এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেয়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘেরাও করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং প্রধান ফটকে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের উপর গিয়ে আশ্রয় নিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ছাদের গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে তাদেরকে গণধোলাই দেয়। এ সময় হুড়োহুড়ি করে ভবনের ভিতর ঢুকতে গিয়ে ও ভবনের উপর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে অন্তত বিশ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে ভবনে আটকে থাকা অন্তত ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পালটা -ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় পুলিশের কোন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে গেছে। তবে কোন হতাহত ও কি পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর