• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৭ ঘন্টা পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ১১:৩০ রাত

‘প্রয়োজনে শহীদ হব, তবুও কোটা আন্দোলনে যাব’

ছবি: সংগৃহীত

‘যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে মানুষ জীবন না দিলে বা রক্ত না ঝরলে সফলতা আসে না। বিপ্লব মানে জীবন দেওয়া, বসে থাকা নয়, ছাত্রদের আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না। তাই প্রয়োজনে শহীদ হব, তবুও কোটা আন্দোলনে যাব।’ 

গত ৪ আগস্ট পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাওয়ার সময় মাকে কথাগুলো বলেছিলেন শহীদ মাহবুব হাসান নিলয় (১৬)। ওই দিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে মারা যান মাহবুব। 

গত রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে শহীদ মাহবুব হোসেনের বাড়িতে গেলে তার মা দিল আফরোজা কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান। 

শহীদ মাহবুব হোসেন পাবনা সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের আরিফপুর বেতেপাড়া মহল্লার আবুল কালাম আজাদের ছেলে। শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাবনা দারুল আমান ট্রাস্টে পড়াশোনা করেন মাহবুব। তারা দুই ভাই দুইবোন। 

মাহবুব জমজ ভাইবোনের একজন। তার জমজ বোন মাহবুবা নাজনীন (১৬) পাবনা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বড় বোন ওয়াকিয়া নাজনীন (২৩) ঢাকা বিজনেস ইনস্টিটিউটের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়াশোনা করেন। ভাই মাহাদী হাসান লিমন (২৯) পাবনা বাংলামোশন ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমায় পড়াশোনা করেন। 

মা দিল আফরোজা বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই নামাজ পড়েতো। তাকে নামাজ-রোজার কথা কখনোই বলতে হতো না। পড়াশোনাও ভালো করত। অনেক মেধাবী ছিল। তার মধ্যে বিপ্লবী একটা কিছু দেখা যেত। নম্র-ভদ্র সব দিক দিয়েই ছেলেটা খুব ভালো ছিল। তাকে অনেক যত্নে লালনপালন করেছি। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু আল্লাহ ওসব স্বপ্ন বাদ দিয়ে শহীদি মৃত্যু দিয়েছে। আমরা অনেক ভাগ্যবান।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু থেকে পাবনায় যত মিছিল হয়েছে সব মিছিলেই আমার ৪ সন্তান অংশগ্রহণ করেছে। বড় মেয়ে ঢাকার উত্তরাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। আর বাকি দুই ছেলে ও এক মেয়ে পাবনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিল মিটিং করেছে। 

দিল আফরোজা বলেন, যেদিন আমার ছেলেকে শহীদ করা হয়, সেদিন সে সকাল সকাল খাওয়া দাওয়া শেষ করে জামাকাপড় পরে দ্রুত রেডি হয়। আমি তাকে বললাম আজকে গেলে কোনো কিছু হতে পারে, না গেলে হয় না? তখন আমার ছেলে বলে রক্ত ছাড়া দেশ স্বাধীন হয় না। প্রয়োজনে শহীদ হবো তবুও কোটা আন্দোলনে যাবই। এটা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর দুপুরের দিকে শুনতে পাই আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ছেলেটা জমজ বোনের সঙ্গে ঝগড়া করত। বোন বলত- তুই জীবনে কিছুই হতে পারবি না। তুই একটা অযোগ্য। আমি তখন বলতাম পচা শামুকেও পা কাটে। তখন ছেলে বলতো আমি এমন কিছু করব যেটা সারাবিশ্ব মনে রাখবে। আমার জন্য সবাই কাঁদবেও। তোমরা কেউ সেটা পারবে না।

দিল আফরোজা বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার আল্লাহর দরবারে দিয়েছি। ওপরের বিচারকই তার বিচার করবে। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে তাতে কি হয়েছে। সেসহ অনেকের রক্তের বিনিময়ে দেশ আজ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এটা আনন্দ ও তৃপ্তির বিষয়। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে জান্নাতবাসী করেন।

বড় বোন ওয়াকিয়া নাজনীন ও জমজ বোন মাহবুবা নাজনীন বলেন, আমাদের ভাইবোনের মধ্যে খুবই মিল মহব্বত ছিল। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। কোটাবিরোধী আন্দোলনে আমরা সব ভাইবোন মাঠে থেকে কাজ করেছি। আমার ভাইকে যেন আল্লাহ সম্মান দেন। শহীদি মৃত্যু যেন কবুল করেন। 

ওয়াকিয়া নাজনীন বলেন, আমি ঢাকার উত্তরাতে থাকি। সেখানেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলাম। আমার বন্ধু-বান্ধবী সবাই যখন আন্দোলন করছে আমি কেন ঘরে বসে থাকব। সবাই মিলে এই স্বৈরাচারকে হঠাতে হবে। এমন মনোবল নিয়ে আন্দোলন করে আজকে সফলতা পেয়েছি। যদিও আমার ভাইকে গুলি করে শহীদ করা  হয়েছে, তবুও আজ সব বাঙালি মুক্তি পেয়েছি।

তিনি বলেন, জমজ বোন মাহবুবা নাজনীনের সঙ্গে সব সময় খুনসুঁটি লেগেই থাকত। আর সে বারবার বলতো আমি যেটা করব সেটা তুই বা এই বাড়ির কেউ করতে পারবি না। আমি এমন কাজ করব মানুষ আমাকে সারাজীবন মনে রাখবে। আমার জন্য সারাবিশ্ব কাঁদবে। সারাবিশ্ব জানবে। ঢাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় জানতে পারি আমার ভাই শহীদ হয়েছে।

বড় ভাই মাহাদী হাসান লিমন বলেন, সেদিন আমরা তিন ভাইবোন একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে আন্দোলনের জন্য প্রথমে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সামনে যাই। এরপর মিছিল নিয়ে আব্দুল হামিদ রোডে ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর অতর্কিতভাবে আমাদের মিছিলের পেছন থেকে গুলি করা হয়। তখন আমি আমার ছোট ভাইকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি। একপর্যায়ে বাবা ফোন করে যে মাহবুব কোথায়। আমি বললাম যে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন বাবা বলে যে তুমি হাসপাতালে গিয়ে তাকে খোঁজ করো। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছোট ভাইয়ের নিথর দেহ। মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পথে পুলিশ রাস্তায় বাধা দিয়ে বলে যে লাশ ময়নাতদন্ত করতে হবে। তখন আমরা বলেছি শহীদের লাশ ময়নাতদন্ত হবে না। তখন আমরা বাড়ি নিয়ে আসি। আসলে যারা গুলি করেছে তারা সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। 

শহীদ মাহবুবের চাচাতো ভাই আনিছুর রহমান বলেন, মাহবুবের মৃত্যুতে আমরা পুরো গ্রামবাসী শোকে কাতর। এই অঞ্চলের সবাই কান্নাকাটি করছে। আসলে এ হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।  তারপরও এসব রক্তের বিনিময়ে আল্লাহ জুলুমবাজদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। 

৪ আগস্ট বেলা সোয়া ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে নামেন। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটক থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত ও অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। 

এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের গাড়িতে আগুন দেন। বিক্ষুব্ধরা দাবি করেন, ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে। 

এ ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- সদর উপজেলার চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং হাজিরহাট বেতেপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪)। 

এ ঘটনায় গত শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে নিহত পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামের বাবা মো. দুলাল উদ্দিন মাস্টার বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় পাবনা-৫ (সদর) আসনের সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দসহ ১০৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার হুকুম দেওয়ার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যার ঘটনায় ১০৩ জনের নামে মামলা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে পারব। আপনাদের জানানো হবে। 

বাঁধন/সিইচা/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com