• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:৩৩ রাত
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষকের দাবি

স্কুলের মূল্যবান জমি উদ্ধার করার পর থেকে একটি চক্রের রোষানলে পড়ি

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ধোয়া তুলে চাইলেই কোন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পদত্যাগ বা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা যাবে না। কোনো অভিযোগ থাকলে প্রমাণসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানাতে হবে। নিয়মানুসারে তদন্ত টিম গঠন করে অভিযোগের সত্যতা পেলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন সব নির্দেশনা উল্লেখ করে গত ২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সকল জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছে।

এ নির্দেশনাকেও তোয়াক্কা না করে ম্যানেজিং কমিটির নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে কক্সবাজারে এখনো একাধিক পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বলপ্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। এর মাঝে জেলার প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশীদুল জন্নাত ও কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলীর পদত্যাগের দাবিতে কতেক শিক্ষার্থীকে সামনে দিয়ে স্বার্থান্বেষী একটি মহল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। 

গত ২১ আগস্ট হতে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৃথক পৃথক ঘটনার মাধ্যমে হামলা, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে ক্ষমতা সন্ধানী মহলের ভাড়াটে লোকজন। ঈদগাঁহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের ধোঁয়া তুলে কিছু শিক্ষার্থীদের সামনে দিয়ে একটি গ্রুপ ঈদগাঁও বাস স্টেশন এলাকায় রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল হতে ব্যরিকেড দেয়। টানা কয়েক ঘণ্টা দু'পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে জনদুর্ভোগ বাড়ে। পরে অবশ্যই উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ব্যারিকেড তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা। 

এ বিষয়টি খোলাসা করতেই রবিবার বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঈদগাঁহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশীদুল জান্নাত। এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর তিনি এ প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে এখনো কর্মরত রয়েছেন।  

তিনি দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সকলের নিরলস পরিশ্রমে স্কুলের অ্যাকাডেমিক সাইডের ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, জেএসসি-এসএসসি ফলাফলে মান বৃদ্ধিসহ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে উপজেলা-জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গৌরব অর্জন করেছে। এছাড়া ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন- শ্রেণিকক্ষ সম্প্রসারণ, নির্মাণ, আধুনিকায়ন, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি, ফুলের বাগান, প্রাচীর তুলে বিদ্যালয়ের অরক্ষিত সীমানাকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। মার্কেট সম্প্রসারণ, উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের আলাদা ওয়াশ ব্লক ও সুপেয় পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছি। নারী হিসেবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও শিক্ষা বিস্তারে নিজের মেধা-মননশীল কাজের মধ্যদিয়ে উক্ত বিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। ফলশ্রুতিতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে যথাক্রমে জেলা ও উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হই। স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী দেশ সেবায় নিয়োজিত। 

প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, ভূমি খেকোদের কবল থেকে স্কুলের মূল্যবান ভূমি উদ্ধার করার পর হতেই একটি চক্রের রোষানলে পড়ি। ২০১৯ সালের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে একজন অভিভাবক সদস্য প্রার্থী আদালতে মামলা করে। মামলার চার বছরের মাথায় ২০২৩ সালে বিবাদীদের চারজন আমার বিরুদ্ধে স্কুলের ফান্ড হতে এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত দেন। যা নিয়ে সদর ইউএনও, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পক্ষে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ আরো একাধিক সংস্থা স্ব-স্ব ভাবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমায় অভিযোগ হতে অব্যাহতি দেয়।   

এরপর তা নিয়ে আর আগায়নি কুচক্রী মহলটি। কিন্তু চলমান সময়ে দেশের সামগ্রিক পট পরিবর্তনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে পুরোনো মিথ্যা ও অযৌক্তিক অভিযোগ মার্কেটে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা আবার মাঠে নামে। তারা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ না জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মসজিদে লিফলেট বিতরণ ও এলাকায় এলাকায় আগের ধারায় মিথ্যে তথ্য প্রচার করে হেনস্তা করা হচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি। সাথে স্কুলে না যেতে হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাদের দাবি মতো পদত্যাগ না করলে, হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন তারা। পুরোনো শিক্ষক হিসেবে স্কুলের উন্নয়নে কাজ করছি, এটাই কি আমার অপরাধ?

খুরশীদুল জান্নাত বলেন, আমি নারী প্রধান শিক্ষক হয়ে উন্নয়ন করছি; এটাই যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে- হেনস্তা নয়, প্রজ্ঞাপন মেনে অভিযোগ করুন-দায়ি হলে শাস্তি মাথা পেতে নেব।

সংবাদ সম্মেলনে সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষক পূর্ণাম পাল, শাহজালাল মুনির, রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলমসহ একাধিক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। 

অভিভাবক আবছার কামাল বলেন, পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর উত্তরোত্তর সফলতায় আশেপাশের প্রতিষ্ঠানগুলো হিংসাত্মক মনোভাব দেখায়। এরা কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষক এবং লোভী অভিভাবকদের হাত করে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চায়। এদের সাথে যোগ দিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে আসতে চাওয়া কুচক্রী কিছু মহলও। সহজে সফল হতে না পেরে যিনি ধারাবাহিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন, সেই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। 

বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেন, প্রাইভেট বাণিজ্যে লিপ্ত কয়েকজন শিক্ষক বাইরের প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সুশৃঙ্খল একটি প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা এর নিন্দা জানায়। সংশ্লিষ্ট অথরিটি আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামাক, সমাধান করুক। বাইরের কেউ কলকাঠি নেড়ে যেন, আমাদের সুন্দর প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস না করে। 

অপরদিকে, সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জেলা শহরের পুরোনো কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে আবদ্ধ করে পদত্যাগে বাধ্য করতে চাপ দিয়েছে প্রার্থী হয়েও সভাপতি হতে না পারা এক প্রার্থীর ছেলের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক। দেশের পট পরিবর্তনকে সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করে প্রথম দফা ৭ আগষ্ট এবং  দ্বিতীয় দফায় ২১ আগস্ট এ হামলা চালানো হয়ে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পেলেও বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষ ভাঙচুর ও প্রধান শিক্ষকের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সভাপতির পদ নিয়ে পূর্বের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলীর। 

উৎকণ্ঠিত প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, একটি শক্তিশালী চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার পাঁয়তারা চালিয়ে আসছেন। এরই জেরে ৭ আগষ্ট   কিছু পুরাতন ছাত্রের সাথে একদল সন্ত্রাসী এসে আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বলেন। পদত্যাগ না করায় তারা বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজও করে এবং সড়ক অবরোধ করে। ২১ আগস্ট আবারো তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে ক্লাস চলাকালীন শ্রেণীকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের টেনে হিঁচড়ে আন্দোলনে নামানোর চেষ্টা করে। এবারও তারা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করলে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সড়ক ছাড়লেও প্রধান শিক্ষককে নানা হুমকি দিচ্ছে চক্রটি। 

প্রধান শিক্ষক বলেন, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুল ২০১৭ ও ২০২৪ সালে সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হয়। ২০১৯ সালে মুহাম্মদ রমজান আলী জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গত ১০ বছর ধারাবাহিক ভাবে ৯৭ শতাংশ পাশ করছে। ধারাবাহিক সফলতায় একটি শক্তিশালী চক্র প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। চক্রটির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এসব বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে।  প্রয়োজনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে এ দু'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়গুলো অবহিত করা হবে। জোর করে কাউকে যাতে পদত্যাগে বাধ্য করতে কিংবা অন্যায়ভাবে হেনস্তা করতে না পারে, এই বিষয়ে সবার পজিটিভ ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়গুলোতে কাজ করছে। 

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com