• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৪২ মিনিট পূর্বে
মো. আবির
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:০৫ বিকাল

বিএনপি নেতার নামেও বিস্ফোরক আইনে মামলা

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছর দুঃশাসনের মধ্যে ১০ বছর কসবা আখাউড়ার সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সাবেক এই মন্ত্রীর আমলে বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ঢালাওভাবে বিভিন্ন মামলায় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে সেই চর্চা এখনও চলছে বলে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

গেল আগস্টের পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে যেন মামলার জোয়ার বইছে আখাউড়ায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার ঘটনাবলি এবং বিগত সরকারের আমলের ইস্যুতেও মামলা হচ্ছে। মামলার পাশাপাশি বেড়েছে মামলা বাণিজ্যও।

এসব মামলায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করার অভিযোগ রয়েছে। কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন ভিন্নদিকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল না এমন ব্যক্তিও আসামি হয়েছেন। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ মামলা আতঙ্কে ভুগছেন। কখন কার বিরুদ্ধে মামলা হয় এই আতঙ্কে তটস্থ সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ টি মামলা হয়েছে আখাউড়া থানায়। এর মধ্যে বর্তমান সরকারকে গণবিপ্লবী সরকার আখ্যা দিয়ে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলার বাদী পুলিশ। বিস্ফোরক আইনে বাকী ৫টি মামলা দায়ের করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হলেন ১৯৬ জন। আরও ৫০৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ২৯ জন।

আখাউড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শাকিল বাদী হয়ে চলতি মাসের ১২ তারিখে আখাউড়া থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৩৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ২৫০ জনকে। এ মামলায় অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তেমনি একজন এ মামলার আসামি হীরাপুর গ্রামের রিপন মিয়া। 

তিনি বলেন, আমি গ্রামের একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। যে ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে ঘটনার দিন বা তার আগে পরে ৪-৫ দিন আমি আখাউড়ায় যায়নি। এলাকার দ্বন্দ্বের কারণে আমাকে আসামি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কাজী ইউসুফ, আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি। তিনি আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য। আখাউড়া থানায় সম্প্রতি করা বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি কাজী ইউসুফ। বিএনপি নেতা হয়েও বিএনপির করা মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। প্রতিহিংসার স্বীকার বলে জানিয়েছেন তিনি।

কাজী ইউসুফ বলেন, আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামলা জনিত কারণে তিনি অফিসে আসেন না। আমি বর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এ বিষয়টি কিছু লোকের সহ্য হচ্ছে না। তাই আমাকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছাত্তার মিয়া। তিনি ২১ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে তার ফুফার বাড়িতে স্ব-স্ত্রীকসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন। তার পাসপোর্ট ও ভিসা তাই প্রমাণ করে। তিনিও বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামী। আবদুস ছাত্তার মিয়া বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। ওই সময়ে আমি দেশেই ছিলাম না, তাহলে ওই ঘটনার সাথে আমি জড়িত কি করে। আমি ইউপি সদস্য হওয়ায় আমাকে এ মামলায় জড়িয়েছে। যা কি-না মোটেও উচিৎ হয়নি। কাজী ইউসুফ ও আবদুস ছাত্তার মিয়ার মতো অনেকই অপরাধ না করেও বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামী হয়েছেন।

প্রতিবেদকের সাথে ফোনে কথা হয় ওই গ্রামের প্রবাসী আরিফ হোসেনের। তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যায়। তখন থেকে তিনি সৌদি আরবে আছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে স্যোশাল মিডিয়ায় করেছেন লেখালেখি। আওয়ামী সরকার পতনের পর প্রবাসের মাটিতে সব বন্ধুরা মিলে দিনটি উদযাপন করেছেন। এর পর অক্টোবরের ৯ তারিখে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। দেশে আশার ২০-২২ দিন পর তিনি জানতে পারেন ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় তিনি আসামি। এর পর তাড়াহুড়ো করে কর্মস্থল সৌদি আরবে ফিরে যায়। ফিরে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সাথে লিয়াজু করে মামলার এজাহার থেকে নাম কাটিয়েছেন। আরিফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমি আমার অবস্থান থেকে আন্দোলন করেও আমার বিরুদ্ধে কেন মামলায় হয়। দেশের সরকার শুধু বদলেছে রাষ্ট্রের বৈষম্য আচরণ বদলায়নি। আমাদের মত সাধারণ মানুষ কি কখনো হয়রানির হাত থেকে মুক্ত হতে পারবো না। সর্বশেষ গত সোমবার হয়েছে বর্তমান সরকারকে গণবিপ্লবী সরকার আখ্যা দিয়ে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে ১৫ জন নামসহ আরও ৭০/৮০জন অজ্ঞাত নাম দিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ নিয়ে আখাউড়ার ছাত্র-সমন্বয়ক আতিক তোষার তার ফেইসবুক আইডি থেকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময়কাররের কয়েকটি ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন আন্দোলনকারীদের নামে মামলা কেন! তাও আবার পুলিশ বাদী। দেখে নিতে হবে বিষয়টা। পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলাটা দায়ের করা হয়েছে তাতে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত তোষার ভাইয়া ও আরাফাত রহমানের নাম রয়েছে ওই মামলায়। বিস্ফোরক আইনে একটি মামলার বাদী আখাউড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শাকিল।

তার সাথে মুঠোফোনে মামলার বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। তিনি বলেন, সামনাসামনি এসে কথা বলেন। এ কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি। 

আখাউড়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, কোন নিরীহ বা নির্দোষ মানুষকে আসামী করা হচ্ছে না। আওয়ামীলীগের আমলে আওয়ামীলীগের যেসব নেতাকর্মীরা বিএনপি বা মানুষের ক্ষতি করেছে মূলত তারাই আসামী হচ্ছেন। বিএনপি নেতা কাজী ইউসুফের নামে মামলা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন মেম্বার কাজী ইউসুফ উত্তর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি না। কৃষক দলের সভাপতি হলেন অন্য ইউসুফ।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, এজহারে যারা বাদি হয়ে মামলা দেয়। সে সময় মামলা নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না। তবে নেওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে যারা জড়িত থাকবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। যদি কেউ জড়িত না থাকে তাদেরকে আমলে আনা হবে না। 

মামলার বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন বাদি যখন অভিযোগ দেয় আমাদের কাছে আসার আগ পর্যন্ত তারা কি করে তা আমরা জানি না। তবে এমন কোন ঘটনা থাকলে প্রমানসহ আমাদের কাছে অভিযোগ দিতে বলুন। যে কেউ হোক না কেন তদন্ত করে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নজরে আনব। তবে বাণিজ্যের সাথে পুলিশ জড়িত না। যদি এমন কিছু পাওয়া যায় তবে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com