
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তার নাম শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। এছাড়া এখন পর্যন্ত ২জনকে আটক করা গিয়েছে, বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ১২টায় টিএসসি সংলগ্ন রমনা কালি মন্দির গেটে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শাহরিয়ারের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক।
তিনি জানান, রাতে সহপাঠীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনেন। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতের সহপাঠীরা বলছেন, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাবি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন শাহরিয়ার। এ সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায় শাহরিয়ারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় তারা। নিহতের ডান রানে বড় জখম রয়েছে।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, এক ঢাবি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঘটনার পর শোকের ছায়া ও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছাত্রদল-গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নেমে পড়েন। এ সময় তারা 'আমার ভাই মরল কেন/ প্রশাসন বিচার চাই', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস/ উই ওয়ান্ট জাস্টিস', 'নিরাপদ ক্যাম্পাস/ আমাদের অধিকার' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ বুধবার প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাংলা একাডেমি সংলগ্ন এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
আরও বলা হয়, শাহরিয়ার আলম সাম্য'র হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করবে।
হত্যার ঘটনায় ২ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাৎক্ষণিকভাবে আটক দুজনের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
রাজধানীর রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দিরের পাশে তিন যুবক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাম্যর ওপর হামলা করেন। এতে হামলাকারীরাও আহত হন। তারা একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে দুজনকে আটক করে। এ সময় পালিয়ে যান আরেক যুবক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আটক দুইজনের পরিচয় ও বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
তার এই অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণ শাহরিয়ার আলম সাম্যের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার, সহপাঠীরা, শিক্ষকরা কিংবা রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা।
নিহত সাম্যের সহপাঠী আহত বায়েজিদ বলেন, আমরা তিনজন ক্যান্টিন থেকে বের হচ্ছিলাম, হঠাৎ ৮-১০ জনের একটি দল আমাদের ঘিরে ফেলে। তারা কোনো কথা না বলেই হামলা চালায়। সাম্যকে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে সে দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আমরা তখনই তাকে মেডিকেলে নিয়ে আসি, কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দেন, আর কিছু করার নেই।
তার আরেক সহপাঠী রাফি বলেন, রাত বারোটার কিছু পরে সাম্য মোটরসাইকেলে করে মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে।
সেই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। হঠাৎই সাত-আটজন ব্যক্তি অতর্কিতে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাম্যকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর