
অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, শহীদদের নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। শহীদরা শহীদ। শহীদদের তালিকা দেওয়া থাকবে। শহীদদের সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এছাড়া তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উড়াল সেতু ও পার্কগুলো তাদের নামে করা হচ্ছে বলে জানান।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন ‘জাতিসংঘ পার্ককে সংস্কারের পর ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’ নামে উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। এ সময় জীর্ণ অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকা প্রায় ৭০ বছর পুরোনো এ পার্কটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
উপদেষ্টা বলেন, অন্যায় অবিচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা সাড়ে ১৫ বছর সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন এই অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে তাদেরকেও স্মরণ করছি। আগামী প্রজন্ম এ উদ্যানে এসে বা উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ত্যাগের কথা মনে রাখতে পারেন সেই জন্যই মূলত উড়াল সেতু ও উদ্যানের উদ্বোধন করা।
আদিলুর রহমান খান বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দৃশ্যমান করার কাজ মেয়র সাহেবরা করবেন। আন্ডারপাসও দরকার। তবে বড় বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা। এটি আমাদের নজরে আছে। জলাবদ্ধতা থেকে মানুষ মুক্তি পায় সেই চেষ্টা হচ্ছে। মেয়র, সিডিএ, ডিসি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রে ৬৯ একর আয়তনের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বে। ১৯৫৪ সালে আবাসিক এলাকাটির জন্য জমি বরাদ্দ দেয় সংস্থাটি। এর মাঝে ২ দশমিক ১৭ একর আয়তনের ওই উদ্যানের নাম শুরুতে ছিল ‘পাঁচলাইশ পার্ক’।
১৯৮৮ সালে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মেয়র থাকাকালে গণপূর্ত অধিদপ্তর সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার জন্য পার্কের দায়িত্ব দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হাতে। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে সে সময়ের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এই পার্কের নাম দেন ‘জাতিসংঘ পার্ক’। সেই থেকে পার্কটি এই নামেই পরিচিত।
পরের মেয়র মনজুর আলমের মেয়াদে ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন পার্কে দুটি সুইমিং পুল ও একটি জিমনেশিয়াম নির্মাণ শুরু করলে সেখানে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সুইমিং পুল নির্মাণ শেষ হলেও সেটি খুব বেশিদিন ব্যবহার হয়নি। পরের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬ সালে বেসরকারি এক কোম্পানির কাছে পার্কটি ইজারা দিতে চাইলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তারপর সিটি করপোরেশন ও গণপূর্তের দ্বন্দ্বে আরো কয়েক বছর গড়িয়ে যায়। তখন থেকে পার্কটি অব্যবহৃত ছিল।
এভাবে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় পার্কে জমেছিল আবর্জনা। মাঠ জুড়ে ছিল বড় বড় গর্ত। এক পর্যায়ে পার্কটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সবশেষ ২০২২ সালে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির আধুনিকায়নে ‘জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান’ প্রকল্পটি হাতে নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন শেষে মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয় একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। পার্কের চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় ২৯৪০ বর্গফুট হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে)।
স্থাপন করা হয়েছে বসার জন্য ৪৪টি বেঞ্চ, দুটি প্রবেশপথ, শিশু-কিশোরদের খেলার সরঞ্জাম, ব্যয়ামের জন্য হরাইজন্টাল বার ও মেটাল পেরগোলা, ড্রেনেজ সিস্টেম, ডাস্টবিন, টয়লেট ব্লক, আলোকায়নের জন্য কম্বাইন্ড লাইট ও স্ট্রিট লাইট, সিসিটিভি ক্যামেরা, সোলার পাওয়ার সিস্টেম ও বজ্রনিরোধক। এছাড়া পার্ক জুড়ে নতুন করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ঘাস লাগানো হয়েছে। এতে এক সময়ের পরিত্যক্ত হয়ে পড়া পার্কটি আবার যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
দুটি সুইমিংপুল নির্মাণ, পার্ক ঘিরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব, সুইমিংপুল দুটি ভাঙা, নতুন প্রকল্প গ্রহণ- সব মিলে পেরিয়ে গেছে এক যুগ। অবশেষে আবার সবার জন্য খুলল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এই উদ্যানটি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর