• ঢাকা
  • ঢাকা, বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৩ মিনিট পূর্বে
আরিফ হোসেন
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৪৫ দুপুর

দালাল চক্রের আস্তানা চরফ্যাশন সরকারি হাসপাতাল 

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

১০০ শয্যা বিশিষ্ঠ চরফ্যাশন সরকারি হাসপাতালকে ঘিরেই গড়ে উঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ক্লিনিকের মধ্যে রোগী ধরার বিরামহীন প্রতিযোগিতার ফলে রোগী ধরার দালালদের দাপট বেড়েছে। হাসপাতাল সড়ক থেকে রোগীর শয্যা পর্যন্ত দাবিয়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে দালাল। সুন্দরী যুবতী আর সুদর্শন যুবক শ্রেণি বাড়তি আয়ের হাতছানি পেয়ে জড়িয়ে পড়েছেন এই পেশায়। চিকিৎসক, ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিক এবং ফার্মেসী ব্যবসায়ি সবাই পোষছেন দালাল।

সব মিলিয়ে চরফ্যাশন সরকারী হাসপাতাল এলাকায় রোগী ধরতে সদাব্যস্ত থাকেন শতাধিক দালাল। যাদের টানাহেছড়ায় বিভ্রান্ত-ক্ষুদ্ধ গ্রাম থেকে শহরে আসা রোগী ও স্বজনরা। এছাড়াও এসব দালাল রোগী ভাগানোর পাশাপাশি সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নেন রোগীদের ঔষধ, মোবাইল ও টাকাসহ নানান জিনিসপত্র। এসব দালাল চক্রের দাপট দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গড়ে উঠা বৈধ-অবৈধ চরফ্যাশন উপজেলায় ৩৮ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো রোগী ধরার জন্য কমিশনের বিনিময়ে এসব দালাল পুষছেন ডায়াগনষ্টিক মালিক পক্ষ ও চিকিৎসকরা। সরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখার কারনে তাদের সহকারী হিসেবে নিয়োজিত ওই দালাল চক্র সড়কে দাড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তাদের পছন্দের চিকিৎসকের কাছে রোগী ভাগিয়ে নিতে তৎপর থাকেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ক্লিনিকগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠায় আর সরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসদের ছত্রছায়ায় এসব দালাল চক্র সক্রিয় থাকায় রোগীরা এসব দালালদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আছেন নিত্যদূর্ভোগ আর বিড়ম্বনার মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চরফ্যাশন সদরসহ উপজেলায় সর্বত্র ছড়িয়ে গড়ে উঠেছে ৩৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ১৪টি প্রাইভেট ক্লিনিক। যেগুলোর মধ্যে ৭টির অনুমোদন থাকলেও বাকী ৩১ টি ডায়গনিস্টিক সেন্টারের এর মধ্যে কোনটিই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছেনা। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর মধ্যে ৫টি প্রত্যন্ত হাটবাজারে এবং ৩৪টি উপজেলা সদরের হাসপাতাল সড়কে গড়ে উঠেছে। ১০০ শয্যার উপজেলা সরকারী হাসপাতালের ২০০ গজের মধ্যে এবং হাসপাতাল সড়কের দু’পাশ জুড়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় সরকারি হাসপাতালগামী রোগীরা প্রায়ই গন্তব্য পর্যন্ত পৌছার আগেই দালালদের বহুমুখী টানাটানির মধ্যে পড়ে। টানাটানি শেষে কোন রোগী সরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছলেও সেখানে ওৎপেতে থাকেন ঝাঁকে ঝাঁকে দালাল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভ্রান্ত করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এরপর গ্রামের সহজ সরল রোগিদের  প্যাথলজি পরীক্ষা ও আধুনিক চিকিৎসার নামে সঠিক ভাবে প্যাথলজি  পরিক্ষা  না করেই  বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার আভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে  অনেক চিকিৎসকও দালালরা এসব প্যাথলজি  থেকে কমিশন পেয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।

সরকারী হাসপাতালকে ঘিরে  গড়ে উঠা এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর বেশির ভাগই নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি। নেই দক্ষ লোকবলও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। আবেদন করেই আধাপাকা ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার।বসানো হয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনসহ কিছু যন্ত্রপাতি। অদক্ষ কিছু টেকনেশিয়ান দিয়ে কারানো হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ভুল ও ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়াও রয়েছে পরিক্ষার রির্পোটের ভিন্নতা।  কতিপয় প্রভাবশালী চিকিৎসকের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ঔষাধের দোকানে নিয়োজিত দালাল চক্রের সদস্যরা ১০০ শয্যার সরকারী হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজে সক্রিয় থাকে। প্রত্যন্তঞ্চলের সাধারন রোগিরা প্রথমেই ১০০ শয্যার সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাই এসব দালাল চক্র সরকারী হাসপাতালকে ঘিরে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন। এসব দালালের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারাও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও ১৪টি প্রাইভেট ক্লিনিকের মধ্যে মাত্র ৫ টি ক্লিনিক  ১০ শয্যার অনুমোতি লোকবল নিয়ে সঠিক ভাবে পরিচালিত হলেও অপর প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে তুলেছেন ২০/ ৩০ শয্যার প্রাইভেট ক্লিনিক।

আবু বক্করপুর ইউনিয়নের সিমা বেগম নামের এক প্রসুতি নারী জানান, সম্প্রতি সময়ে তিনি চরফ্যাসন হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেলে মাঝ পথেই পড়েন দালালদের খপ্পড়ে। তাকে ভুল ঝুঝিয়ে নিয়ে যান সিটিহার্ট প্রাইভেট হাসপাতালে সেখানে তার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে গেলে রিপোর্ট আসে বি-পজেটিভ। বিষয়টি তার সন্দেহ হলে তিনি ওই পরিক্ষাটি পার্শ¦বর্তী এসটিএস  ক্লিনিকে পরিক্ষা কারালে রিপোর্ট আসে ওপজেটিভ। দুই ক্লিনিকে রক্তের গ্রুপের ভিন্নতা দেখে তিনি ফের মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানেও তার রক্তের নির্ণয় ও পজেটিভ আসে। রক্তের গ্রুপের ভিন্নতার কারনে তার সিজারিয়ান অপারেশনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। 

সচেতন মহল জানান, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুয়ায়ী অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি নেই। তারপরও তারা ক্লিনিক ও প্যথলজি ল্যাব চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ক্লিনিকে বা ডায়গনিস্টিক সেন্টারে এসব অনিয়ম হলেও নেই কোন প্রসাশনের তৎপরতা। 

স্থানীয় বাসিন্ধা মামুন হোসাইন জানান, চিকিৎসকদের সহযোগী ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার এবং ঔষাধের দোকনে নিয়োজিত এসব দালাল চক্রের সদস্যরা রোগীদের নানা কৌশলে উন্নত চিকিৎসার লোভ দেখিয়ে হাসপাতাল  চত্বর থেকে বাইরে এনে প্রাইভেট প্যাথলজি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অথচ হাসপাতালে এর চেয়ে ভালো প্যাথলজি পরীক্ষা হয়ে থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চিকিৎসকরা এসব দালালদের সঙ্গে জড়িত থাকায় ঘটনাটি জানলেও কোনো কথা বলেন না। কারণ পরে এসব চিকিৎসকই প্রাইভেট ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা দিয়ে উচ্চহারে ফিস ও পরীক্ষার কমিশন হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনাটি বারবার  স্বাস্থ্য প্রশাসনকে  জানালেও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, কিছু চিকিৎসক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিকদের ছায়া তলে থেকে অপকর্ম করছেন এসব দালালরা। রক্ষক যখন নিজেরাই ভক্ষক হয়। তখন আর করার কিছুই থাকেনা। রোগীদের অহেতুক পরিক্ষা নিরিক্ষা দিয়ে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ থেকে সামান্য কিছু সুবিধা নেয়ার জন্যই কিছু চিকিৎসক এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।

ফাস্ট কেয়ার মেডিকেল সভির্সেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিল্লাত এলাহী  জানান, আমার জানামতে ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কোন কর্মচারী দালালির সাথে জড়িত নয়। কিছু ভাষমান লোক ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের  নামে দালালি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নামধারী দালালদের প্রতিহত করার জন্য মালিক পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।  

চরফ্যাশন হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শোভন বসাক দালাল চক্রের দৌরাত্বের কথা স্বীকার করেন। তার দাবি, হাসপাতাল চত্তরে দালালদের উৎপাত ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন অগত করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্তর থেকে দালাল নিমূলের চেষ্টা চলছে।তবে চিকিৎসকরা দালাল পুষছে এমন বিষয় সঠিক নয়। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি জানান, সরকারী হাসপাতাল চত্তর থেকে দালাল নির্মূল করার জন্য খুব শ্রীঘ্রই ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এবং ডায়াগনিস্টিক সেন্টার গুলো কাগজ পত্র যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com