
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনারাম গ্রামে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে গড়ে তোলা রহস্যময় 'আয়না ঘর' ঘিরে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কবর-আকৃতির ওই ঘরে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্দি থাকার পর শুক্রবার রাত ১টার দিকে মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসেন শিল্পী খাতুন (৩৮) ও আব্দুল জুব্বার (৭৫) নামের দুইজন।
তবে এতদিন বন্দি থাকার পরও তাদের শরীরে নির্যাতনের তেমন কোনো চিহ্ন না থাকায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রাম্য চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম আরাফাতসহ ২৫ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উভয় মামলায় প্রধান আসামি আরাফাতকে শনিবার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরাফাত পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের মৃত রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে। ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন চান্দাইকোনা ইউনিয়নের লক্ষ্মীবিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী এবং আব্দুল জুব্বার পূর্ব পাইকড়া গ্রামের বাসিন্দা।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন। এখনো প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। ভবনের নিচে পাওয়া কক্ষগুলো মাত্র ৪ ফুট উঁচু, দৈর্ঘ্য ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। শিল্পী খাতুনকে অপহরণ করে চার মাস আটকে রাখার অভিযোগে তার স্বামী মনছুর রহমান ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। অন্যদিকে, আব্দুল জুব্বারকে ৫ মাস ২৫ দিন বন্দি রাখার অভিযোগে তার ছেলে শফিকুল ইসলাম ৬ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ৫-৭ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। দুই মামলাতেই আসামির রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
সোনারাম গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের নিচে একটি গোপন ঘরের অস্তিত্ব রয়েছে, যা জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ধ্বংস করেছে। প্রতিটি কক্ষ দেখতে অনেকটা কবরের মতো। কক্ষের সামনে করিডোর ও প্রবেশের জন্য ছোট ছোট দরজা রয়েছে। পূর্ব কোণায় একটি মাটির সুড়ঙ্গ পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ওই নারী ও বৃদ্ধ পালিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, আরাফাত কখনো সাংবাদিক, কখনো সমন্বয়কের পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন। গ্রাম্য চিকিৎসক হলেও তার কোনো বৈধ সনদ নেই। তার ভাই সাভারের এনাম মেডিকেলের চিকিৎসক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তৎকালীন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আরাফাত অপহরণ করে মানুষকে ওই আয়না ঘরে বন্দি করে রাখতেন। এটি একটি কিডনি পাচার চক্রের অংশ হতে পারে।”
ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন জানান, “প্রায় ছয় মাস আগে আরাফাত আমাকে অপহরণ করে। এরপর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ঘোরানোর পর চার মাস আগে গোপন ঘরে বন্দি করে। সেখানে আগে থেকেই জুব্বার ছিলেন। আরাফাত কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গ বিক্রির হুমকি দিত।”
অন্যদিকে আব্দুল জুব্বার বলেন, “আমার কাছ থেকে আট বিঘা জমি লিখে নিতে চেয়েছিল। রাজি না হওয়ায় ব্যাপক নির্যাতন করে। দিনে একবার খেতে দিত, গোসলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।”
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে এখনো তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে, একজন আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ুন কবীর জানান, “নির্মাণাধীন ভবনের নিচের কক্ষগুলো আগের অবস্থায় সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর