
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সুলতানা রাজিয়া হলে প্রাণী উচ্ছেদ অভিযান চালানোর বিষয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যানিমেল স্যাভিয়ার্স অব বাংলাদেশ’ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
সোমবার (৫ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্রধান ফটকে ওই বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। ‘ভয়েসলেস, নট ওয়ার্থলেস-সেভ ক্যাম্পাস অ্যানিম্যালস!’ স্লোগানকে সামনে রেখে সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রাণিপ্রেমী সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন।
বিক্ষোভ সমাবেশের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, গত শনিবার (৪ মে) 'হলের পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য হিংস্র প্রাণী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে' এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুলতানা রাজিয়া হল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, "এই মর্মে সুলতানা রাজিয়া হলে অবস্থানরত সকল আবাসিক ছাত্রীদের জানানো যাচ্ছে যে, হলে কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণী হলের পরিবেশ দূষিত করছে। হলের পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য হলে হিংস্র প্রাণী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। উক্ত অভিযানে সকল আবাসিক ছাত্রীদেরকে সহযোগিতা করার জন্য বলা হলো।"
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ এবং সমালোচনা শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক প্রতিবাদমূলক পোস্ট দৃষ্টিগোচর হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বিক্ষোভ সমাবেশ করে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।
এসময় 'অ্যানিমেল স্যাভিয়ার্স অব বাংলাদেশ' এর প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য সচিব ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী আল ফারুক বলেন, "যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অনুষদ, পশু পালন অনুষদের মতো দুটি অনুষদ রয়েছে যারা প্রাণীদের সুরক্ষা ও লালন পালন নিয়ে কাজ করে থাকে, সেখানে সুলতানা রাজিয়া হলের এমন বিজ্ঞপ্তি আমাদের জন্য লজ্জাজনক।"
বিক্ষোভ সমাবেশে 'অ্যানিমেল স্যাভিয়ার্স অব বাংলাদেশ' এর প্রস্তাবিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব আলম বলেন, "প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯ অনুসারে প্রাণীকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করা যাবে না। যদি করা হয় তবে তার জন্য ৬ মাসের জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। পোষা প্রাণীরা মানুষের পরম বন্ধু। এমনকি বেওয়ারিস কুকুরও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। এভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালালে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। প্রাণীর জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে, ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারি। প্রাণী অধিকার যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।"
এ বিষয়ে সুলতানা রাজিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "হলের অর্ডিন্যান্স অনুসারে কোন জীব জানোয়ার হলে রাখা যাবে না। মূল ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন হলের একজন নারী শিক্ষার্থী একটি বিড়ালকে লাথি দেয়, পরে বিড়ালটি মেয়েটাকে আঁচড় দেয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে এ বিষয়ে অবগত করলে শিক্ষার্থীর মা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং মেয়ের চিকিৎসার জন্য হল প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে।
ঘটনা গুরুতর হয়ে গেলে সেসময় ওই নারী শিক্ষার্থীকে থামানোর জন্য আমার অনুপস্থিতিতে হলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বা সুপারভাইজার কেউ একজন ওই নোটিশটি দিয়ে দেয়। এটি একটি সামান্য বিষয়, এই বিষয়কে কেন্দ্রীভূত করে আমার সাথে কথা না বলে মানববন্ধন করতে হবে কেন? আমি হলের প্রভোস্ট, যদিও এই নোটিশের ব্যাপারে আমি জানতামই না।"
উচ্ছেদ অভিযান হবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট বলেন, "মেয়েদের মধ্যেই তো রয়েছে গ্রুপিং। একদল বিড়ালকে আদর করে খাওয়ায়, আরেকদল বিড়ালকে কাছে আসতে দিবে না, এতেই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বাহির থেকে হলে বিড়াল ঢুকে, অনেক সময় কুকুরও দেয়াল টপকে ঢুকে। ওই নোটিশটি ওরা আমার অজান্তেই দিয়েছে। এইসব অভিযান এগুলো কিছুই হবে না।"
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর