
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং বিগত ১৫ বছরের নানা অপরাধের ঘটনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তা সহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৩০ নেতা-কর্মীর নামে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (৪ মে) ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ(দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ সংশোধনী /২০১৪ এর ৪/৫ ধারায় সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিকুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এতে নিষিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকিবুল হাসান রনি (আসামি নং-০১), সাবেক সহ- সভাপতি মাহমুদুল আহসান লিমন (আসামি নং-০২), সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব (আসামি নং-০৩), বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক জোবায়ের হোসেন (আসামি নং-০৪), বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল হালিম (আসামি নং-০৫), সাবেক রেজিস্ট্রার ড.মো. হুমায়ুন কবির (আসামি নং-০৬), নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাব্বির আহমেদ (আসামি নং-০৭), সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল শান্ত (আসামি নং-০৮), সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম রানা (আসামি নং-০৯), সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু (আসামি নং-১০), নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি আল মাহমুদ কায়েস (আসামি নং-১৩), সাধারণ সম্পাদক রিয়েল সরকার (আসামি নং-১৪), সাবেক সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ (আসামি নং-২০), সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশাররাত শবনম (আসামি নং-১০০), নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হীরক মুশফিক (আসামি নং-১০১), নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেলিম আল মামুন (আসামি নং-১০৩), বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের সাবেক ডিন উজ্জ্বল কুমার প্রধান (আসামি নং-১০৪), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন .ড. মো. নজরুল ইসলাম (আসামি নং-১০৫), সাবেক প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি (আসামি নং-১০৬), শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম (আসামি নং-১০৭), হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাহিদুল ইসলাম (আসামি নং-১০৮), মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাসুদ রানা (আসামি নং-১১০), হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোল্লা আমিনুল (আসামি নং-১১১), ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তরিকুল ইসলাম (আসামি নং-১১২),চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুম হাওলাদার (আসামি-১১৩), নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুয়েল মোল্লা (আসামি নং-১১৪), সহকারী রেজিস্ট্রার আবু বক্কর ছিদ্দিক (আসামি নং- ১২৪, সেকশন অফিসার জাহনারা নেওয়াজ স্মৃতি (আসামি নং-১২৮), নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈম(আসামি নং-৮৫), নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ (আসামি নং-৬৮) সহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৭০/৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলন দমনে তৎকালীন মাফিয়া সরকার সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ সহ দলীয় ক্যাডার বাহিনী লেলিয়ে দিলে সারা দেশে অসংখ্য ও সাধারণ মানুষ আহত ও নিহত হয়।
ঘটনার ধারাবাহিকতা শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ জনগণ সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ একাত্মতা পোষণ করে রাজপথে নামে সে অবস্থায় তৎকালীন মাফিয়া সরকার আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করলে আমরা মাফিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ তৎকালীন সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করলে ১-১৫ নং আসামি সহ আরো শিক্ষক, কর্মকর্তা, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীসহ গত ০৩/০৮/২০২৪ সকাল ১০.০০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে 'হাসিনায় আস্থা' নামীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করে এবং সমাবেশ করে। উক্ত সমাবেশে ১-৫ নং আসামিগণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করে এবং চলমান গণহত্যার সমর্থনে সাফাই গায়।
এমনকি তারা প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের দমনে পরিচালিত গণহত্যার সমর্থনে বিভিন্ন বক্তব্য দেয় এবং ঐ সমাবেশে ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেহ সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচি ক্যাম্পাসে কোন কর্মসূচি পালন করলে, তারা দাহ্য সশস্ত্রভাবে মোকাবেলা করার জন্য ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের উৎসাহিত করে।
এমনকি উল্লিখিত আসামীরা ঘোষনা দেয় যে, প্রয়োজনে ছাত্র আন্দোলন দমনে তারা অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের সাথে মাঠে থাকবে উক্ত ঘোষণার পর দুপুর অনুমান ২.৩০ ঘটিকার দিকে আসামিগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটেরিয়ামে এক ঘরোয়া সভার আয়োজন করে ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য সশস্ত্র প্রস্তুতি নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান সকল নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১-২০নং আসামিগণ কিরিচ, লোহার রড ও দেশীয় আগ্নেয় অস্ত্র লইয়া ঐ দিন বিকাল ৩.৩০ ঘটিকায় ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়।
অতঃপর গত ০৪/০৮/২৪ ঘটিকায় আমরা আন্দোলনের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে যোগদানের নিমিত্ত ১-১১ নং সাক্ষী সহ ক্যাম্পাসের শতাধিক শিক্ষার্থী বিকাল অনুমান ৫.০০ ঘটিকায় একত্রিত হইয়া ক্যাম্পাসের মূল ফটকে উপস্থিত হইলে ১,২,৩,১০,১৭,১৬,১৯ নং আসামি প্রত্যেকের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র, রিভলভার।
এছাড়া ২০ হতে ৩০ জন আসামির প্রত্যেকের হাতে রাম দা এবং অন্যান্য সকল আসামীর হাতে লোহার রড ও লাঠি লইয়া আমাদের উপর আক্রমণ করে। ১,২,৩,১০,১৬,১৭,১৯ নং আসামি তাহাদের হাতে থাকা রিভলভার দিয়ে আমাদের দিকে তাক করিয়া গুলি করে আগাইতে থাকলে দূরত্বে কারণে কাহারো গায়ে লাগে না।
আমরা আসামিদের আক্রমণের সকল প্রতিরোধ গড়ে তুললে আমাদের সাথে আরও ২/৩ শতাধিক শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় জনগণ সম্পৃক্ত হয় এবং আসামীরা আমাদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ লিপ্ত হয়।
৯, ১১, ১৩, ১৪, ১৫ নং আসামীগনের হাতে থাকা ককটেল ছাত্র জনতার দিকে নিক্ষেপ করলে তা বিস্ফোরিত হয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।’
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর