
ভোলার চরফ্যাশনে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন বোরো ধান। যেদিকে দু-চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করে ঘরে তুলছেন। কাঙ্ক্ষিত দামেও ধান বিক্রির আশা তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছরে চরফ্যাশন উপজেলাতে ৩০ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। এসব জাতের মধ্যে উফসী জিংক সমৃদ্ধ ব্রি-৭৪, ব্রি-২৮ ও ব্রি-৬৭ ধানের চাষাবাদ হয়েছে।
এছাড়াও অন্যান্য জাতের স্থানীয় বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে এই উপজেলায়। এ বছরে চরফ্যাশন উপজেলাতে কৃষকদের আবাদকৃত জমিতে ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি বিভাগ প্রতিমন ধানের দাম নির্ধারণ করেছেন ১০০০ টাকা। যার মূল্য আসে ৪৯৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের বহুল কাঙ্ক্ষিত ফসল মাঠ থেকে সংগ্রহ করে ঘরে তুলতে পারবেন।
জানা যায়, প্রতি বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বোরো ধান উৎপাদন করেন কৃষকরা। আমনের মৌসুম শেষ হওয়ার পরেই বোরোর মৌসুম শুরু হয়। ধান রোপণ শুরু হয় বাংলা কার্তিক-অগ্ৰহায়ণ মাস থেকে এবং ধান কাটা চলে বাংলা বৈশাখের পুরো মাস জুড়ে। হেমন্তকালের শুরু থেকে গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ধানের সময় চলে এবং এই ধানের মূল ফলন বসন্তকালে হয় বলে একে বাসন্তিক ধান বলেও ডাকা হয়।
কৃষকেরা জানান, এই বছরে সঠিক সময়ের মধ্যে জমি মেরামত করে ফসল ফলানোর উপযোগী করে বোরো ধানের চাড়া রোপণ করেছি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো চাষাবাদ হওয়ায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এক সপ্তাহ আগ থেকে কৃষকরা ভোর থেকে শুরু করে দিনভর ব্যস্ত থাকছেন ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার কাজে। কৃষকরা ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারবে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, কৃষকরা রবি শস্য উৎপাদনের মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের শস্য উৎপাদন করে থাকেন। তবে এর মধ্যে বোরো ধান হল সাধারণ কৃষকদের আশা ভরসার প্রতীক। প্রতিবছরেই সোনালি ফসলের উপর নির্ভর করে চলে কৃষকদের জীবনযাত্রা, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, সংসারের খরচ এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন। বিগত বছর গুলোতে বোরো ধান আবাদ করে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার কারণে লোকসানে পরতে হয়েছে। কৃষকরা আশা করছেন ভালো দামেই এবার ধান বিক্রি করবেন।
আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ মিজি জানান, এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে উফসী ব্রি-৭৪ ধান চাষ করেছি। ধান এ বছর ভালো হয়েছে। এছাড়াও বারসো-৫ এবং হিরা-২ চাষ করার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বীজ না থাকায় চাষ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে মোট ৮০ থেকে ৯০ হাজার খরচ হয়েছে। খরচের তুলনায় এ বছর লাভ করেছি। এছাড়াও সকল ফসলের ভালো ফলন হয়েছে তবে ধান ভালো হয়েছে সকল ফসলের চাইতেও বেশি।
নুরাবাদ ইউনিয়নের কৃষক সামসুদ্দিন মাঝি জানান, চলতি মৌসুমে ৫ একর জমিতে বোরে ধানের আবাদ করেছি। সঠিক সময়ের মধ্যে ধান রোপণ করেছি এবং আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে জমিতে আশানুরূপ ফলন রয়েছে। অনেক কৃষকের ধান পেকেছে তারা জমি থেকে ধান সংগ্রহ করছেন। আমার আবাদকৃত জমি থেকে ধান সংগ্রহ করতে এখনো এক সপ্তাহ লাগবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুদা হুদা জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।
দুই সপ্তাহ আগে থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কৃষক মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করে ঘরে তুলতে পারবেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর