
ঢাকার মিরপুরে চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ২০ বছর বয়সী গার্মেন্টস শ্রমিক বিপ্লব শেখ। তার এই নির্মম মৃত্যু শুধু একটি সম্ভাবনাময় জীবনকেই থামিয়ে দেয়নি, বরং তার পুরো পরিবারকেও অনিশ্চয়তা ও শোকের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করেছে।
বিপ্লব শেখের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার বুড়ি গাংনী গ্রামে। শহীদ বিপ্লব মিরপুর ১০ নম্বরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন বাবা পারভেজ শেখ, মাতা এলিজা এবং সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে। গার্মেন্টসে কাজ করে পরিবার চালাতেন এই তরুণ। স্বপ্ন ছিল স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার।
কিন্তু ১৯ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যায় চলমান ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি বিপ্লব। রাত ১১টার দিকে পরিবারের কাছে আসে এক অজ্ঞাত ফোন “আপনার ছেলের অবস্থা ভালো না, মিরপুর আজমল হাসপাতালে চলে আসেন।” হাসপাতালে ছুটে গিয়ে বাবা-মা ছেলের নিথর দেহ খুঁজে পান। মাথা ও কোমরের পিছনে দুটি গুলির চিহ্ন—তাঁর মৃত্যুর নির্মম প্রমাণ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মরদেহ দ্রুত না নিলে পরে তা গ্রহণ করা যাবে না। ফলে তাঁরা তড়িঘড়ি করে লাশ বাড়ি নিয়ে যান এবং পরদিন গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করেন।
নিহতের বাবা পারভেজ শেখ বলেন, “এই সহায়তা এককালীন। কিন্তু আমার পরিবার তো প্রতিদিন বেঁচে আছে। সদ্য জন্ম নেয়া নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে বুক ফেটে যায়।” তিনি জানান, সরকারিভাবে এককালীন কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। জামায়াত ও বিএনপি'র পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তিনি বলেন, “আমার ছেলের এই অকাল মৃত্যু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার কিনা, তা এখনো অজানা। কিন্তু একটি পরিবারের রুটি রুজির ভরসা এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা এলাকার মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তারা চান দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিহতের পরিবারের জন্য নিয়মিত আর্থিক সহায়তার নিশ্চয়তা।
এই ঘটনাটি আবারো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আন্দোলন বা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের নামে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের জীবন কতটা ঝুঁকিতে থাকে। একটি পরিবার, একটি শিশু—জীবনের শুরুতেই হারিয়েছে তার অভিভাবক। রাষ্ট্র ও সমাজ কি এর দায়িত্ব নেবে।
স্থানীয়রা জানান, শহীদ বিপ্লবের বাবা মো. পারভেজ শেখ গাংনী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক। শহীদ বিপ্লব পারিবারিক প্রয়োজনে তার স্ত্রীকে গর্ভাবস্থায় রেখে আর্থিক প্রয়োজনে মিরপুর ১০ এর আশপাশে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জুলাই ২০২৪ ছাত্রগণ অভ্যুত্থানে সম্মুখ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন। পরবর্তীতে তার স্ত্রী একটি সন্তান প্রসব করেন।
বর্তমানে পরিবারটির ভবিষ্যৎ এক প্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তাই পরিবারটিকে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা প্রদান, পরিবারের কোন সদস্যকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থার আহ্বান জানান স্থানীয়রা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর