
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে অন্য কয়েকজন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। এতে তার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে বলে দাবি ওই ভুক্তভোগীর।
শনিবার (১৭ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী হোয়াইট হাউজ মেসে এই ঘটনা ঘটেছে।
পরে ভুক্তভোগীকে ইবি মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরেরদিন আবারও প্যানিক অ্যাটাক হলে তাকে ঝিনাইদহ মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়।
ওই শিক্ষার্থী আগে থেকেই প্যানিক অ্যাটাকের রোগী ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের উপপ্রধান অফিসার ডা. পারভেজ হাসান। এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া নামের একটি ভূঁইফোঁড় পেইজ থেকে এসংক্রান্ত একটি ভিডিও আপলোড হলে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের দাবি, ওই পেইজে বিষয়টিকে থেকে র্যাগিং বলে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ নিয়ে অভিযুক্তদের কয়েকেজন ওই পেইজের বিরুদ্ধে ইবি থানায় জিডি করেছেন।
জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের অলিক কুমার সিকদার। শনিবার (১৭ মে) সকালে ভুক্তভোগী অলিক তার মেসের সিট নিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বর্তমান মেস ম্যানেজার বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাকে ডাকেন। এসময় ভুক্তভোগীর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান কয়েকজন শিক্ষার্থী (অধিকাংশ আইসিটি বিভাগের)। পরে ভুক্তভোগী রুমে ফিরে গেলে তার প্যানিক অ্যাটাক হয়। পরবর্তীতে সহপাঠীরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে ফেরত আনেন। রাতে কিছুটা সুস্থ হলেও পরেরদিন আবারও অবস্থা অবনতি দেখা দিলে দুপুরের দিকে তাকে ঝিনাইদহ মেডিকেলে নেয়া হয়।
ভুক্তভোগী অলিক কুমারের অভিযোগ, ১৭ মে দুপুরে সিট নিয়ে এক ভাইয়ের সাথে কিছু কথা হয়। এর জের ধরে ওইদিন রাতে একটি অন্ধকার রুমে ভাই আমাকে ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ৪জন ভাইকে আমি শনাক্ত করতে পারি। এর মধ্যে সোলায়মান, নোমান, তালাশ ও মুহিদ ভাই ছিল। সোলায়মান ভাই আমার সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে গালাগালি ও গায়ে হাত তোলার উপক্রম হয় এবং নোমান ও তালাশ ভাইও অত্যন্ত রূঢ় কথা বলে। যেগুলো আমার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়। এর জের ধরে আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে যাই। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, কীভাবে আমার ক্যাম্পাস লাইফ অতিক্রম করব তা নিয়ে চিন্তিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এর সুষ্ঠু বিচার করেন।
অভিযোগের বিষয়ে আইসিটি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন বলেন, তাকে নিয়ে যখন মেডিকেলে গেছি তখন ডাক্তারকে সে বলছিল তাকে র্যাগিং দেয়া হয়েছে। অথচ এটি প্রায় প্রথম বর্ষের কথা অর্থাৎ ৩ বছর আগের ঘটনা। এদিকে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’ নামের পেইজে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কারণে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে গেছে। আমরা এই পেইজের বিরুদ্ধে মামলা করবো। এই পেইজকে শারীরিক মানসিক নির্যাতনের প্রমাণ দিতে হবে।”
ছাত্রাবাসের পরিচালক বলেন, “ভুক্তভোগী সিট নিয়ে বৈষম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করলে তাকে ডেকে সমাধান করার চেষ্টা করছিলাম। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। তাকে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। পরে শুনেছি প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে। মেসের সিট নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে র্যাগিং করা হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুনেছি সে আগে থেকেই প্যানিক অ্যাটাকের রোগী।”
বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “আমি ঝিনাইদহে মেডিকেলে আসছিলাম। ওই শিক্ষার্থী কিছুটা সুস্থ। শুনেছি তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন না করলে এমনি এমনি তো প্যানিক অ্যাটাক হয় না। প্রশাসন বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য আহ্বান করছি।”
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইবি মেডিক্যালের উপপ্রধান অফিসার ডা. পারভেজ হাসান বলেন, “ওই ছেলেটা এর আগেও ৪/৫ বার আসছিল। প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যাটা আগে থেকেই ছিল। গতরাতে বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম কেউ কিছু করছে কিনা? সে দাবি করছিল যে প্রথম বর্ষে আসার পর তাকে র্যাগ দেয়া হয় এবং এখনও তাকে কেউ কিছু বললে প্যানিক ভোগে। তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।”
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “বিষয়টা শুনেছি। সার্বিক বিষয়ে খতিয়ে দেখতে প্রক্টরিয়াল বডি নিয়ে বসব।”
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর