
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়ায় এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিক্ষোভ করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে মধুর ক্যান্টিন থেকে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভটি কলা ভবন-কেন্দ্রীয় গ্রান্থগার-চারুকলা-শাহবাগ থানা হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এতে অংশ নিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়ানক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার যে আকাঙ্খা সেখানে ন্যাক্কারজনকভাবে এই অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পেরেকটুকু টুকেছে। তিন-তিনটি অভিযোগের থাকার পর তাকে বেকুসুর খালাশ দেওয়া হলো কিন্তু এই আজাহার তৎকালীন রংপুরের আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে ফেরেস্তা ভেবে রায় দিল। জুলাই অভ্যুত্থানের ১০ মাস হয়ে গেলে এখন পর্যন্ত কোন বিচার নিশ্চিত করা হয়নি অথচ যুদ্ধপরাধীদের বেকসুর খালাচ দেওয়া হচ্ছে। বেকসুর খালশের পর বলা হচ্ছে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার গণহত্যার বিচার করতে চেয়েছেন। যেই ধারায় গণহত্যার বিচার করা হবে সেই একই ধারায় জামায়তে ইসলামের বিচার করাও সম্ভব। জানি না, কোন অজ্ঞাত কারণে বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছি, আগামী আমরা সকল প্রকার ৭১ ও ২৪ এর গণহত্যাকরীদের বিপক্ষে ঠিক একইভাবে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাবো।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শিমুল কুম্ভকার, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ইডেন মহিলা কলেজ শাখা সভাপতি সুমাইয়া শাহিনাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদি আমলে আমরা গুটি কয়েক লোকবল নিয়েই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আর ছাত্র শিবির ছাত্রলীগের সাথে মিশে হলে থেকে গুপ্ত রাজনীতি করেছে। তারাই এখন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়। ক্যাম্পাস গুলোতে যে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে সেই জামায়াত শিবিরের রাজনীতিকে আমরা চিরতরে নিষিদ্ধ করতে চাই।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, জুলাই গণ অভ্যূত্থানের যে চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই চেতনার সাথে আজকে সাংঘর্ষিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের কে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। ১৯৭১ সাল পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুক্তিযুদ্ধকে একটা ব্যবসায় পরিণত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে তারা কাজ করেছিল। ফলে আজকে জুলাইয়ের মধ্য দিয়ে সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আমরা পরাজিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের গণহত্যা এবং চব্জিশের গণহত্যা দুটোকে পারস্পারিক করা যাবে না। কিন্তু ২৪ এর গণহত্যার বিচার চাইতে গিয়ে যারা একাত্তরের আল বদর রাজাকার আর শামসদের কে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছেন, সেটা কোন ভালো লক্ষণ নয়। আমরা সেটা মেনে নিবো না।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর