
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা সারা দেশের মোট ডেঙ্গু রোগীর এক-চতুর্থাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩ জন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এবং বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে মারা যান। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ১৫৮ জন রোগী ভর্তি আছেন।
এই পরিস্থিতিতে বরগুনাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা না করায় এবং জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১২ লক্ষ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট রয়েছে। মাত্র ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে ৫ জন ছুটিতে থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপি সহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় প্রেসক্লাব চত্বরে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী কর্মীরা। পরে সকাল ১১টায় একই স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপি।
বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি তালিমুল ইসলাম পলাশের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং সাবেক সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ ফারুক।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী নাসরিন আক্তার শিমু অভিযোগ করেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তা মোনালিসা জেরিন এবং কিশোরী উপমাসহ ১০ জনেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জেলায় আরও মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার কন্যা উপমা এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের কন্যা মোনালিসা জেরিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।
বরগুনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে জরুরি ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার এবং নার্স নিয়োগের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরামের ব্যানারে বরগুনা প্রেসক্লাব ও স্থানীয় সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসব সভার আয়োজন করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা জেলা প্রশাসন, পৌর পরিষদ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ জানান, যেখানে সারা বাংলাদেশে সাড়ে ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী, সেখানে শুধুমাত্র বরগুনা জেলাতেই দেড় হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ছুটিতে যাওয়া উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, মাত্র ১০ জন ডাক্তার দিয়ে এই জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং এই পরিস্থিতিতে পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা রয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, স্বাস্থ্য সচিব বা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কেন এখন পর্যন্ত বরগুনা সফর করেননি এবং এর ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর