
কক্সবাজারে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। এছাড়া, জেলায় নতুন করে করোনা সংক্রমণও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ জানায়, জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ৪৩১ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু জুন মাসের প্রথম ২৫ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ২১৬। মৃতদের মধ্যে ৫ জন স্থানীয় এবং একজন রোহিঙ্গা নাগরিক।
অন্যদিকে, একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫০৮ জন। এদের মধ্যে ৩০৩ জন স্থানীয় এবং ২ হাজার ২০৫ জন রোহিঙ্গা। জুন মাসে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৫৬ জন, যাদের মধ্যে ৭২৬ জনই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর।
ঝিলংজা এলাকার বাসিন্দা হাজী নুরুল আমিন জানান, গত মাসে তার ছোট ভাই শাহেদ (৩২) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার বড় ভাই ইয়াকুবও বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জ্বর, মাথাব্যথা ও ঠাণ্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন বহু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী আসমা খাতুন (২৬) জানান, প্রথমে তিনি ডেঙ্গু ভেবেছিলেন, পরে পরীক্ষায় ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। তার ৮ বছরের মেয়েও জ্বরে ভুগছে।
জেলায় নতুন করে করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ১৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা এবং ৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক জানান, আক্রান্ত সবাই নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন এবং প্রতিটি উপজেলায় আইসোলেশন কেন্দ্র চালু রয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আগে কক্সবাজারে এতটা ছিল না। এটি মূলত বান্দরবনের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসেছে। বান্দরবন ও কক্সবাজারের মানুষের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের কারণে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী পরিচ্ছন্নতার অভাব, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও জমে থাকা পানি।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী এলাকার মজনু মিয়া জানান, ম্যালেরিয়ার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয় এবং সেটি ব্যয়বহুল।
টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক রুবেল হোসেন জানান, ক্যাম্পে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া নিয়ে প্রচুর রোগী এলেও প্রয়োজনীয় কিট, ওষুধ ও আইসোলেশন বেডের অভাব রয়েছে।
কক্সবাজারে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও করোনার একত্রে সংক্রমণ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন জরুরি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর