
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকূপ গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেগবতী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ৫ গ্রামের মানুষ। কালীগঞ্জ শহরসহ অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতের জন্য ভাঙাচোরা বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা।
স্থানীয়রা জানান, ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। নলডাঙ্গা রাজবাড়ির পাশে একটি সরু সেতু থাকলেও সেটি চলাচলের অনুপযোগী। তাছাড়া সেটি দিয়ে ঘুরপথে যেতে হয় এবং ভ্যান বা মালবাহী গাড়ি নিয়ে পারাপার হওয়া কঠিন।
তৈলকূপ গ্রামের তিন দিকে বেগবতী নদী প্রবাহিত হওয়ায় ভারী ফসল বা অন্যান্য মালামাল পরিবহনে অনেক পথ ঘুরতে হয়। বাধ্য হয়ে প্রতি বছর চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। সাঁকো নির্মাণে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়।
সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগে। ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় রোগীদের শহরে নিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় কৃষকদের কষ্ট পোহাতে হয় এবং সময়মতো বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহমেদ জানান, দুর্বল বাঁশের সাঁকো দিয়ে আতঙ্কে পারাপার হতে হয়। তৈলকূপী গ্রামের আবুল কাশেম জানান, সাঁকো ভেঙে প্রায়ই মানুষ আহত হন। ২৫ বছর আগে তার শ্যালক সাঁকো ভেঙে পড়ে গিয়ে চোখে আঘাত পেয়ে মারা যান। ৪ বছর আগে তার স্ত্রী স্ট্রোক করে সাঁকো দিয়ে হাসপাতালে নেয়ার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান।
শিক্ষার্থীরা জানায়, একটি সেতুর স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। বছরের ৬ মাস পানিতে ডুবে থাকে এবং বাকি ৬ মাস বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তাকে প্রতিদিন এই ভাঙাচোরা সাঁকো দিয়ে পার হয়ে কলেজে যেতে হয়।
স্কুল শিক্ষক ফুলছার আলী জানান, এই গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা শহরে যায় এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। নদীর ওপারে বারোপাখিয়া মাদ্রাসা এবং নরেন্দ্রপুর ঘোষনগর মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ জানান, তৈলকূপী গ্রাম এবং রাজবাড়ির পাশে নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার দেওয়া হবে। কিন্তু দু’পাড়ের বসতিরা জায়গা দিচ্ছে না। ডিজাইন অনুযায়ী ১৮ ফুট সেতুর জন্য ২৪ ফুট জায়গা প্রয়োজন। এলাকাবাসী জায়গা নির্ধারণ করে আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর