মৌসুমের শুরুতেই মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের লবণচাষিরা। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে প্রতি মণ লবণের দাম ছিল ২৪০ টাকা, সেখানে নতুন লবণ মাঠে উঠতেই দাম নেমে এসেছে ১২০-১৪০ টাকায়। এই অস্বাভাবিক দরপতনের প্রতিবাদে কুতুবদিয়ার লবণচাষিরা সোমবার (২৪ নভেম্বর) কাফনের কাপড় পরে মাঠে নেমে বিক্ষোভ করেছেন।
বিকেলে কুতুবদিয়ার লেমশীখালী উপকূলে দেখা যায় ভিন্ন ধরনের এক প্রতিবাদ। চাষিরা লবণ উৎপাদন বন্ধ রেখে দু’ঘণ্টা সড়কে মিছিল করেন। একপর্যায়ে সড়কে লবণ ঢেলে তার ওপর শুয়ে পড়ে দৃশ্যমান প্রতিবাদ জানান তারা। তাদের অভিযোগ- লবণ আমদানি ও মিল মালিকদের চক্রান্তে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।
নাজিম উদ্দিন নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এই শিল্প বাঁচাতে না পারলে আমরা না খেয়ে মরব। তাই কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নেমেছি।’
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক চাষি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা দেশের লবণ উৎপাদন করি, তবু দাম ঠিক করে বিদেশ থেকে লবণ আনে। এতে আমরা কোথায় দাঁড়াব?’
সরেজমিনে লেমশীখালী উপকূলে দেখা যায়, মণের পর মণ নতুন লবণ মাঠে স্তুপ করে রাখা, কিন্তু নেই ক্রেতা। দাম শুনেই অনেক চাষি বিক্রি না করে লবণ জমিয়েই রাখছেন।
চাষিদের ভাষ্য- প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে বাঁশ, পলিথিন, কাদামাটি, মজুরি সহ ব্যয় দাঁড়ায় ২০০ টাকার বেশি। সেখানে ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি করা মানে লোকসান গুনেই মৌসুম পার করা।
লবণচাষি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ২৪০–২৮০ টাকায় লবণ বিক্রি করেছি। এবার ১২০ টাকা বলছে। এতে চাষ রেখে বাঁচব কীভাবে?’
লেমশীখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন- ‘এই দরপতনের মূল কারণ লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত। দেশের উৎপাদিত লবণ বাজারে থাকতেই আমদানি করা হলে চাষিরা দাম পাবেন না। সরকার আমদানি বন্ধ করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করলে দেশের লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’
জানা গেছে, কক্সবাজারে প্রায় ৬৯ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন করেন প্রায় ৪১ হাজার চাষি। কিন্তু ন্যায্যমূল্যের অনিশ্চয়তায় চলতি মৌসুমে এখনো মাঠে নামেননি ৩০ হাজারের বেশি চাষি।
স্থানীয়রা বলছেন- দীর্ঘদিন ধরেই লবণের বাজার মিল মালিক আর আমদানিনির্ভর নীতির ওপর নির্ভর করে। ফলে প্রতি মৌসুমেই দাম ওঠানামা করে চাষিদের লোকসান গুনতে হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চাষিরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, লবণ আমদানি বন্ধ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করা হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
তাদের দাবি- লবণ আমদানি অবিলম্বে বন্ধ, উৎপাদনের ব্যয় বিবেচনায় সরকারি ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, লবণ সংরক্ষণের জন্য সরকারি গুদাম বৃদ্ধি, পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ।
চাষিরা মনে করছেন, সরকার যদি দ্রুত সঠিক নীতি গ্রহণ না করে তবে এই মৌসুমই হবে লবণ শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। কারণ উৎপাদন খরচ না তুলতে পারলে অনেকেই আগামী বছর মাঠে নামবেন না।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর