কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব খেয়াছড়ি গ্রাম আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গেছে। গ্রামটিতে কয়েকশ মানুষের বসবাস থাকলেও এখানে কোনো পাকা রাস্তা নেই, এমনকি একটি সেতুও নেই। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা থিমছড়ি খাল এখানকার মানুষের জীবনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্ষাকালে এই খাল আরও ভয়ংকর রূপ নেয়। বাঁশের সাঁকো পানির নিচে তলিয়ে গেলে পুরো গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে।
সম্প্রতি নুরুল হক নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার লাশ কবরস্থানে নিতে স্বজনদের কোমর পানিতে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়েছে। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে বহু মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
স্থানীয় যুবক আব্দুল মান্নান জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে তারা এই দুর্ভোগ সহ্য করছেন। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বৃষ্টি হলে ঘর থেকে বের হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি লাশও কোমর পানিতে বয়ে নিতে হয়।
মান্নান আরও জানান, একবার সেতুর জন্য বরাদ্দ এলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও কিছু নেতার কারণে সেই প্রকল্প অন্য গ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমেনা খাতুন জানান, সামান্য ব্যথা উঠলেই তিনি আতঙ্কে থাকেন, কারণ হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই। অ্যাম্বুলেন্স বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না।
মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল খালেক বলেন, বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারে না। খালের ওপারে থাকা শিক্ষার্থীরা আসতে না পেরে কান্নাকাটি করে।
স্থানীয় বৃদ্ধ রশিদ আহমদ জানান, তার ছেলেবেলা কেটেছে বাঁশের সাঁকোতে হেঁটে এবং বার্ধক্যে এসেও সেই সাঁকো পার হতে হচ্ছে।
স্কুলছাত্রী নুরজাহান জানায়, বইয়ের ব্যাগে পানি ঢুকে যায় এবং জুতা খুলে কোমর পানিতে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।
যুবক হারুন বলেন, মৃত মানুষকে শেষ বিদায় জানাতেও যদি কোমর পানিতে নামতে হয়, তাহলে জীবিতদের মর্যাদা কোথায়?
সবজি বিক্রেতা কাসেম জানান, বাজারে পণ্য নিতে গেলে এক হাতে ঝুঁকি আর অন্য হাতে আল্লাহর নাম নিতে হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, তারা কোনো রাজনীতি বোঝেন না, শুধু একটি পাকা সেতু ও রাস্তা চান, যাতে তারা নিরাপদে বসবাস করতে পারেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারেন এবং অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পারেন।
এ অবস্থায় পূর্ব খেয়াছড়ি গ্রামের মানুষ উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, তিনি খেয়াছড়ির মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে অবগত আছেন এবং বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর