বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও প্রধান উচ্ছেদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ ১৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের বরিশাল কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে ১৮ জন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যাদের নথিপত্র তলব করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন: সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ শাখার প্রধান স্বপন কুমার দাস, সার্ভেয়ার তাপস, সার্ভেয়ার নাছির, সার্ভেয়ার মশিউর, সার্ভেয়ার ও আর্কিটেক্ট সাইদুর, জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা লকিতুল্লাহ, সম্পত্তি শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ, প্লান শাখার কর্মকর্তা লোকমান, প্লান শাখার কালটু, সম্পত্তি শাখার মাহাবুবুর রহমান শাকিল, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, বাজার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম, ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী এইচএম কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মুরাদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এবং সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সচিব মাসুমা আক্তার।
দুদক বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ১৮ জন ব্যক্তির নাম, পদবি, শাখা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য এবং সার্ভেয়ার তাপস, সার্ভেয়ার নাছির, সার্ভেয়ার মশিউর, জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল, প্লান শাখার কালটু, সম্পত্তি শাখার ফিরোজ ও শাকিল, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, বাজার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম ও ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমানের নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়েছে।
অন্যদিকে, সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের সময়ে সিটি কর্পোরেশনের দিঘীর মালিকানা ও বালু ভরাট সংক্রান্ত কাজের নথি, ২০২২ সালে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ব্যানার তৈরির জন্য বরাদ্দকৃত ১৩ লাখ টাকা, খোকন সেরনিয়াবাতের ফেসবুক পেজের বুস্টিংয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার নথি এবং সাবেক মেয়রের ল্যাপটপ, ড্রোন ক্যামেরা, চেয়ার, টেবিল, মনিটর, আইটি মেশিনসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় বাবদ বরাদ্দকৃত ৫০ লাখ টাকার খরচের যাবতীয় রেকর্ডপত্র তলব করেছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা যায়, তলবকৃত কিছু নথি ইতোমধ্যে দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে, তবে এখনও অনেক নথি পাওয়া যায়নি। অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক মোজাহার আলী সরদার বলেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বর্তমানে নথিপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, সদ্য অপসারিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ, প্রতিটি দপ্তরে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ঘুষ বাণিজ্য ও ব্যাপক অর্থ লোপাটের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এদের মধ্যে উচ্ছেদ শাখার প্রধান স্বপন কুমার দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। স্বপন কুমার দাস মূলত পরিসংখ্যানবিদ হলেও তিনি উচ্ছেদ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা ইএনও এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্বপন কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল জানান, তিনি ব্যক্তিগত বিষয়ে দুদকের চিঠি পেয়েছেন এবং দ্রুতই প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করবেন। তবে অন্যদের অভিযোগ বা নথির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর