• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩৭ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ১০:২৮ দুপুর

কক্সবাজারে অজানা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত টেকনাফ ও উখিয়ার মানুষ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এক অজানা ভাইরাস। জ্বর, সারা শরীরে ও গিঁটে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং চুলকানি এই রোগের প্রধান উপসর্গ। প্রথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই রোগ শনাক্ত হলেও বর্তমানে এটি আশেপাশের গ্রাম এবং পুরো কক্সবাজার জেলায় বিস্তার লাভ করেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় মাস ধরে চলা এই ভাইরাসের প্রকোপে প্রতিদিনই রোগীরা হাসপাতালে ভিড় করছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

টেকনাফের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দুল আমিন চৌধুরী জানান, প্রথমে তার ছোট মেয়ে আক্রান্ত হয়। এরপর একে একে পরিবারের ৬-৭ জন সদস্য একই উপসর্গে আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, “শরীরে প্রচণ্ড জ্বর, সমস্ত গিঁটে ব্যথা ছিল, এমনকি হাঁটতেও পারতাম না। মুখে খাবারের রুচি ছিল না। ডাক্তার শুধু ব্যথার ওষুধ আর প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।”

একই এলাকার গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন জানান, তার পা এমনভাবে ফুলে গিয়েছিল যে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। ডায়াবেটিস থাকায় তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি এবং পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আছেন।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রণয় রৌদ্র জানান, রোগটি ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো মনে হলেও পরীক্ষায় সেগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে এবং শরীরে তীব্র ব্যথার কারণে চলাফেরায় অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে। তিনি রোগীদের আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার অনুরোধ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এই রোগে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বিপজ্জনক হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্রাম, প্রচুর তরল গ্রহণ এবং ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা উত্তম।

স্থানীয়দের দাবি, এই রোগ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেই ছড়িয়েছে। সেখানকার ঘনবসতি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং অনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কারণে এটি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে।

টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক আবদুর রহমান জানান, প্রথমে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকজনের মধ্যে এমন জ্বর হওয়ার কথা শোনেন। পরবর্তীতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা একই রোগে আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, “জীবনে এত ভয়ানক শরীর ব্যথা কখনও হয়নি। মনে হচ্ছিল শরীরটাই যেন ভেঙে পড়ছে।”

রোগীরা জানিয়েছেন, কেউ কেউ সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও পুনরায় আক্রান্ত হচ্ছেন, যা তাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসুস্থতা থাকা রোগীদের মধ্যে রোগের স্থায়িত্ব বেশি দেখা যাচ্ছে।

টেকনাফের সাবরাং এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, তিনি প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিন পর সুস্থ হন, কিন্তু ২০ দিন পর আবার একই উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হোয়াইক্যংয়ের মুদি দোকানদার মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, “এই রোগে আক্রান্ত হলে মনে হয় শরীরের হাড়গুলো গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমি এক সপ্তাহ দোকান খুলতে পারিনি। এমনকি টয়লেটে যেতেও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে হয়েছে।”

উখিয়ার ইনানীর গৃহবধূ সাজেদা বেগম জানান, তিনি, তার দুই সন্তান ও স্বামী—মোট চারজন একই সময়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সারা শরীরে চুলকানি ও ব্যথার কারণে রাতে ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ওষুধে তেমন কাজ না হওয়ায় তারা শুধু পানি, ডাবের জল ও ফল খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের এক সদস্য জানান, প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়ি থেকে আক্রান্ত রোগীর খবর আসছে। আগে শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই রোগ সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন হ্নীলা, হোয়াইক্যং, সাবরাং, নয়াপাড়া—সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও স্বাস্থ্যকর্মী হাসিনা আক্তার জানান, ক্যাম্পে প্রতিদিনই এমন ভাইরাল জ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তবে তাদের ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। রোগীরা বারবার আক্রান্ত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় হাসপাতাল থেকে কিছু তথ্য তারা পেয়েছেন, তবে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ভাইরাস শনাক্ত করা যায়নি। এটি নতুন কোনো ভাইরাস সংক্রমণ কি না, তা জানার জন্য রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো সচেতনতা। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রামে রাখা, প্রচুর পানি পান করানো, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়া—এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলেই দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এটি একটি ভাইরাল ইনফেকশন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করবে।

স্থানীয়রা বলছেন, জ্বর ও ব্যথার এই অজানা রোগ এখন সাধারণ অসুখের মতো মনে হলেও এটি যাতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তারা দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম পাঠানো এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

রার/সা.এ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]