
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে পশুর হাট বসতে দেয়নি যৌথবাহিনী। শনিবার বাজারটি বন্ধ করে দেওয়ার পরপরই দিনারপুর পরগনাবাসীর ব্যানারে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেটের বৃহত্তম গরুর হাটটি বন্ধ হয়ে গেলে এর পার্শ্ববর্তী হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে গরুর হাট বসানো হয়। জনতার বাজার থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ ফুট দূরে এই হাটটি অবস্থিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের বিশেষ দল জনতার বাজারের আশেপাশে অবস্থান নেয় এবং মাইকিং করে লোকজনকে বাজার ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। এতে বিপাকে পড়েন হাজার হাজার গরু ব্যবসায়ী। পরে তারা পার্শ্ববর্তী হাজীগঞ্জ মেলার বাজারে গিয়ে গরু তোলেন, যা মুহূর্তের মধ্যে জমে ওঠে।
জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ জানান, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসন বাজারটি বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে দিনারপুর পরগনার মানুষ মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন কাজী তোফায়েল আহমদ এবং পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, আব্দুশ শহীদ, আব্দুর রশিদ, ময়না মিয়া, কাজী জাহিদ আহমদ, সাবেক মেম্বার স্বপন মিয়া প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রশাসন বাজারটি বন্ধ করেছে। তারা এই হাট রক্ষার জন্য ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও ঘোষণা দেন।
এদিকে, যৌথবাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মে নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এসময় হাট কমিটির সদস্য ও অন্যরা সরকারি কাজে বাধা দেন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদারকে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় ১ জুন পানিউমদা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় ৩৪ জনের নামে মামলা করেন।
মামলার সূত্রে, গত ২৯ জুন যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে আটক করা হয়। এর আগে ২৮ জুন রাতে হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের মারধর করে এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই ঘটনায়ও ১৩ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ৮ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ৫ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান হাটটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ৩১ জানুয়ারির পর বন্ধের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে বাজার পরিচালনা কমিটি হাইকোর্টে রিট করলে আদালত জেলা প্রশাসনের আদেশ স্থগিত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে হাজীগঞ্জ মেলার গরুর হাটটি বসানো হয়। ২০০১ সালে দক্ষিণ গজনাইপুরের লোকজন জনতার বাজার নামে নতুন হাট চালু করেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এই বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ায় হাটটি দ্রুত জমে ওঠে এবং একপর্যায়ে সিলেটের সবচেয়ে বড় গরুর হাটে পরিণত হয়।
সর্বশেষ খবর