
"যতই সংস্কার বা পুনর্গঠন হোক না কেন, মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও সহনশীলতা জাগ্রত না হলে মানবিক রাষ্ট্র বা সমাজ গড়া সম্ভব নয়। আলোকিত রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে মানুষকে মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে", বলেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
শনিবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে "আলোকিত হালুয়াঘাট রুপকল্প" শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। পৌর শহরের অগ্রযাত্রা কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে হালুয়াঘাটের গণ্যমান্য এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যোগ দেন। তাঁরা হালুয়াঘাটের সার্বিক উন্নয়নে রুপকল্প ও অভিকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাদের অভিমত তুলে ধরেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই নৃশংসতা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ না থাকলে সে মানুষ নামের অমানুষ।
তিনি বলেন, আমরা যতই উন্নয়নের কথা বলি না কেন, একটা মানুষের মধ্যে মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ, ভাতৃত্ববোধ ও মমত্ববোধ না থাকলে সেই উন্নয়ন শুধু কথামালা বা অবকাঠামোর মধ্যে থেকে যাবে।
প্রিন্স বলেন, ব্যক্তির দায় দল নেবে না। দল সেই দায় নিতে পারে, যা দল নির্দেশ দেয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি বিএনপির ডিকশনারিতে নেই। এসব অনৈতিক কাজ বিএনপি প্রশ্রয় দেয় না। গত কয়েক মাসে তা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগের মতো অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিত তাহলে বিএনপিকে দোষ দেয়া যুক্তিসঙ্গত হতো। বিএনপি তা করছে না। এর পরেও যারা এসব বিষয়ে বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে দুই একটি দল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ফয়দা নিতে তৎপর। যাতে নির্বাচন বিলম্বিত হয়। অসত্য কিছু দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা যায় না। জনগণের ভেতর বিএনপির শেকড়। যারা ভাবেন টোকা দিলে বিএনপি পড়ে যাবে, তারা বকার স্বর্গে বাস করছেন।
গতকাল পুরাতন ঢাকায় সংগঠিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নাই। আমি ভিডিওতে দেখে স্তম্ভিত, লজ্জিত। যারা এই জঘন্য কাজ করেছে তারা কোনো দলের হতে পারে না। যিনি নিহত হয়েছেন, তিনিও যুব দলের কর্মী। যিনি হত্যাকারী তিনিও যুব দলের কর্মী। যুব দলের হোক বা না হোক, তিনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি সবারই থাকতে হবে। দোষী যেই হোক তার কঠোর শাস্তি হতে হবে। এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীরও দায় আছে বলে মনে করি।
এ পর্যন্ত অনৈতিক কাজের জন্য বিএনপি যাদেরকে বহিষ্কার করেছে, তাদের কতজনকে আটক করা হয়েছে? বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সন্ত্রাসী দমনে কী কাজ করেছে, যাতে এসব দুষ্কৃতকারীরা ভয় বা আতঙ্কে থাকবে? আমরা গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এভাবে দেখতে চাই নাই। শক্তিশালী পুলিশিং ব্যবস্থা শান্তিপূর্ণ সমাজের জন্য একান্ত অপরিহার্য। সন্ত্রাসীরা যদি ভয় না পায়, আতঙ্কে না থাকে, তবে সন্ত্রাসী কাজের বিস্তার ঘটবে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আমি মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টিকে রাজনৈতিক কালার না দিয়ে সন্ত্রাস হিসেবেই দেখা উচিৎ। এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানবিকতা সবার মধ্যে জাগ্রত হতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহবায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমজাদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল ঘাগড়া, বাবু বিশেশ্বর চৌহান, হালুয়াঘাট সাধারণ পাঠাগারের সভাপতি মজিবর রহমান, কয়লা আমদানি ও রফতানীকারক গ্রুপের মহাসচিব অশোক সরকার অপু, হালুয়াঘাট বিআরডিবির চেয়ারম্যন আবু হাসনাত বদরুল কবীর, বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যন শাহ আফাজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশসহ আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর