
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ঠেঙ্গামারা রেলগেটের গেটম্যান আফসার উদ্দিন সোহাগ। ২০১৯ সালে সরকারি প্রকল্পে নিয়োগ পেলেও তাঁর জন্য নেই কোনো গেট, ঘর বা বসার স্থান।
সরেজমিনে দেখা যায়, রেললাইনের পাশে গাছতলা অথবা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসেই ডিউটি করেন সোহাগ। ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে লেভেল ক্রসিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে পথচারী ও যানবাহন থামিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন তিনি।
সোহাগ জানান, সাত বছর ধরে এভাবেই তিনি ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে ডিউটি করছেন। এমনকি বসার জন্য একটি বাঁশের মাচা তৈরি করা হলেও সেটি ভেঙে গেছে।
একসময় সোহাগের সাথে সাইফুল ও রিয়াজুল নামে আরও দুইজন গেটম্যান ছিলেন। দীর্ঘ তিন বছর একই বেতনে কাজ করার পর এবং চাকরি জাতীয়করণ না হওয়ায় রিয়াজুল চাকরি ছেড়ে দেন। বর্তমানে সোহাগ ও সাইফুল পালা করে দিনে ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করেন।
সোহাগ আরও জানান, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি যানবাহন ও পথচারীদের থামান। এ সময় তৃষ্ণায় তাঁর গলা শুকিয়ে গেলেও দায়িত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসার বা পানি পান করার সুযোগ থাকে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই লেভেল ক্রসিংয়ের পাশেই একটি প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি বাজার রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রেললাইন পারাপার হয়। গেটম্যান থাকলেও তাঁদের নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো ন্যূনতম অবকাঠামো।
এ বিষয়ে সোহাগ বলেন, রেলওয়ের উচিত তাঁকে একটি ছাদ এবং গেট তৈরি করে দেওয়া। পাশাপাশি সাত বছর আগে যে বেতনে তিনি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, এখনো সেই বেতন পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। চাকরি জাতীয়করণ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, "এভাবে দুইজন মানুষ ঝড়-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে, এটা দেখে আমরা নিজেরাই লজ্জিত। এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সাত বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।"
এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, তিনি বিষয়টি জানতেন না। এখন খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন, কেন এই খোঁজ নিতে সাত বছর লেগে গেল?
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর