
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের পিতা-মাতার চোখের জলে জুলাই স্মুতি বর্ণনা, খুনি-ফ্যাসিবাদীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা ও জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়ার আহবানের মধ্য দিয়ে মানিকগঞ্জে জুলাই শহীদ দিবস পালিত হয়েছে।
আজ বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলানায়তনে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্র্তৃক আয়োজিত “জুলাই শহীদ দিবস”পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় মানিকগঞ্জ জেলার ৫ জন শহীদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। শহীদ মো. রফিকুল ইসলামের বাবা মো. রহিজ উদ্দিন, শহীদ সাদ মাহমুদের বাবা বাহাদুর খান, শহীদ মহিউদ্দিন মোল্লার মা তাসলিমা বেগম ও শহীদ শাফিক উদ্দিন আহম্মেদ (আদনান) এর মা জারতাজ পারভীন সন্তানদের ও জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিচারণ করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (যুগ্ন সচিব) ড.মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, কোন অবস্থাতেই আমাদের সন্তানদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। তাদের স্বপ্ন বৈষম্যহীন, সন্ত্রাসমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত, অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী এক নতুন বাংলাদেশা গড়তে হবে। সরকার প্রশাসন,সকল রাজনৈতিক শক্তি, সিভিল সোসাইটি সহ সকল মানুষকে শহীদ পরিবারের পাশে থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসাবে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোছাঃ ইয়াসমিন খাতুন বলেন, শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আমরা একসাথে কাজ করবো।
শহীদ শাফিক উদ্দিন আহম্মেদ আদনানের মা জারতাজ পারভীন বলেন, আমাদের বাধা উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থে,মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে আমাদের কলিজার টুকরা সন্তানেরা নিরস্ত্র অবস্থায় খুনি হাসিনা বাহিনীর মোকাবেলা করে জীবন দিয়েছে। ওদের স্বপ্ন এক নতুন বাংলাদেশ, ওদের স্বপ্ন এক বৈষম্যহীন মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এক বছর হয়ে গেলেও আজও জুলাই ঘোষনাপত্র দেয়া হচ্ছে না।
এই শহীদ জননী ক্ষোভের সাথে বলেন, আমার ছেলে হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফোন করলে ঠিকমত ফোন ধরেন না। আসামী গ্রেফতারের কথা বললে নানান তালবাহানা করেন। আমি প্রসিকিউশনকে প্রশ্ন করেছিলাম-হাসিনা যদি ৫০ বছর পর তার বাবার বিচার করতে পারে তাহলে তরতাজা মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা কেন? প্রসিকিউশন বলে-আপনাদেরও অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, দ্রুত জুলাই ঘোষনাপত্র দিতে হবে এবং আমাদের সন্তান হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে। শহীদ মাতার কণ্ঠে সন্তান হারানোর বর্ণনা শুনে পুরো পরিবেশ থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। উপস্থিত স্রোতারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
শহীদ রফিকের বাবা রহিজ উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে শহীদ হবার পর পরই অনেক ছেলেরা এসে আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলো আপনার এক রফিক নেই তাতে কি হয়েছে-আমরা হাজার রফিক আছি। কিন্তু এখন আমি কাউকে পাই না। উল্টো নানান রাজনৈতিক ফ্যাসাদের ভয় আমাদের দেখানো হয়।কেউ কেউ বলে, এসব শহীদদের কবর এক সময় থাকবে না। আমাদের মর্যাদা থাকবে না। আমরা চাই দেশে রাজনৈতিক হানাহানি বন্ধ হোক। আপনারা যারা এক সাথে খুনিদের হাত হতে দেশকে রক্ষা করছেন তারা এক সাথে চলুন।
শহীদ আরিফুল ইসলাম সাদের বাবা মো. শফিকুর ইসলাম বলেন, নিজেদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি বন্ধ করুন। কারো নিজের স্বার্থের জন্যে আমাদের সন্তানেরা জীবন দেয় নাই। দেশে জন্যে জীবন দিয়েছে অতএব আপনারা দেশের স্বার্থে কাজ করুন।
আলোচনা সভায় সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ শাহিদুজ্জামান, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহানুর ইসলাম, সাংবাদিক মোঃ আব্দুল মোমিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলা সাধারন সম্পাদক নাহিদ মনির, ছাত্র নেতা রমজান মাহমুদ সহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
পরে কোর্ট মসজিদে জুলাই শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা, আহতদের সুস্থ্যতা কামনা এবং দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বিপ্লবীদের মাঝে গাছের চারা বিতরন, ম্যারাথন দৌড়, আলোচনা সভা সহ জুলাই বিপ্লবকে স্বার্থক করার জন্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর