
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুক হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারির ফলে আগের নীতিমালা এবং সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
নতুন নীতিমালায় যা আছে:
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে কিছু নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের অভাব বা অনিয়ম দেখা যাওয়ায় ভোটারদের আস্থা কমেছে। তাই কমিশন একটি সুসংগঠিত, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্যতা:
পর্যবেক্ষক হতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমানের হতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকলে পর্যবেক্ষক হওয়া যাবে না।
নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র:
পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে হলে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় বা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধিত পর্যবেক্ষকদের কমিশন থেকে মুদ্রিত পরিচয়পত্র দেওয়া হবে, যা দৃশ্যমানভাবে বহন করতে হবে এবং হস্তান্তর করা যাবে না। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে তাদের পর্যবেক্ষকদের তালিকা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও তা দেখাতে হবে।
পর্যবেক্ষক মোতায়েন ও দায়িত্ব:
উপজেলা, মেট্রোপলিটন থানা অথবা সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী পর্যবেক্ষকদের মোতায়েন করা হবে। কোনো এলাকায় একাধিক সংস্থা আবেদন করলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রতিটি সংস্থা সর্বোচ্চ পাঁচজন করে ভ্রাম্যমাণ পর্যবেক্ষক রাখতে পারবে। ভোট গণনার সময় প্রতিটি ইউনিটে একজন করে পর্যবেক্ষক উপস্থিত থেকে গণনা ও ফলাফল একত্রীকরণ পর্যবেক্ষণ করবেন এবং গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কক্ষ ত্যাগ করতে পারবেন না।
করণীয় ও আচরণবিধি:
পর্যবেক্ষকদের ভোটারের গোপন ভোট দেওয়ার অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। ভোট প্রদানের গোপন কক্ষে প্রবেশ করা, কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে আচরণ করা, নির্বাচন উপকরণ স্পর্শ করা, অথবা কোনো উপহার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সংস্থাগুলোর দায়িত্ব:
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা রক্ষা ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক:
বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। তবে তাদের বিদেশি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কর্মচারীদের যথাক্রমে বিদেশি ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করতে হবে।
প্রতিবেদন:
ভোটগ্রহণের সাত দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং এক মাসের মধ্যে সামগ্রিক প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে।
আইনি বাধ্যবাধকতা:
নীতিমালার কোনো বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি প্রাধান্য পাবে। কমিশনের অনুমতি ছাড়া নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য এই নীতিমালার বেশির ভাগ শর্ত প্রযোজ্য নয়। কমিশন যেকোনো সময় নীতিমালায় সংযোজন বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।
নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা:
কমিশন আশা করে, এই নীতিমালা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করবে এবং ভোটারদের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে ইসি পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধন দিয়ে আসছে।
সর্বশেষ খবর