
গাজীপুরসহ সারাদেশে অনলাইনভিত্তিক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ‘মিস্ট্রাল এআই’-এর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিগুণ-তিনগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে লাখো মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জুন মাসে গাজীপুরে জমকালো আয়োজনে যাত্রা শুরু করে ‘মিস্ট্রাল এআই’। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ৪০ দিনের মধ্যে তা ১০ লাখ টাকায় পরিণত হবে। এমন লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে শুধু গাজীপুরেই প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছেন।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল অ্যাপে প্রতিদিন মুনাফা তোলার সুযোগ থাকলেও সম্প্রতি একদিনে তিনগুণ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে পুনরায় বিনিয়োগ করতে বলা হয়। এরপর থেকেই অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১৯ জুন গাজীপুরের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে প্রতিষ্ঠানটির একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ খান এবং এবি পার্টির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক প্রিন্সিপাল হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, অনুষ্ঠানে তাদের ‘মিস্ট্রাল এআই’ এর ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।
প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, অভিযুক্তরা সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে প্রতারণার পথ সহজ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আমজাদ খান কোম্পানীর সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনিও একজন বিনিয়োগকারী এবং বিনিয়োগকারী হিসেবেই ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা প্রতিদিন মুনাফা তুলতেন। হঠাৎ করে একদিন তিনগুণ লাভের কথা বলা হয় এবং বিশ্বাস করে আরও টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরদিনই অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায় এবং কোম্পানির ম্যানেজারের বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর কার্যালয়ের ম্যানেজার ইকবাল সরকার দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানটির কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। তবে তিনি দাবি করেন, বিশ্বের প্রভাবশালী ২০১ জন ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের মালিক, যাদের মধ্যে বিল গেটস, ফেসবুক ও ইউটিউবের মালিকরাও রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এর আন্তর্জাতিক সনদ থাকলেও বাংলাদেশে অনুমোদন নেই।
তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ মিস্ট্রাল এআই-তে বিনিয়োগ করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনলাইনে মুরগির ওজন বাড়ানোর ওষুধ বিক্রিসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান জানান, আগে এই বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে ছিল না। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা অভিযানে নেমেছেন এবং জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর