
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন আবেদনে কিছু ত্রুটি পাওয়ায় দলটিকে সেগুলো সংশোধনের জন্য ১৫ দিন সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ত্রুটিগুলো সংশোধন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ত্রুটিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দাখিল করা আবেদন যাচাই-বাছাই করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রুটিগুলো হলো:
১) দলের কার্যকর জেলা দপ্তরগুলোর ঠিকানাসহ তালিকা দেওয়া হয়নি। ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই।
২) উপজেলা/থানা দপ্তরগুলোর ঠিকানাসহ তালিকাও দেওয়া হয়নি। এছাড়া, ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক (ন্যূনতম ২০০ জন) ভোটারের সদস্য অন্তর্ভূক্তি পাওয়া যায়নি। কিছু উপজেলা/থানার সদস্য তালিকায় অন্য উপজেলা/থানার ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে একই ভোটারকে বারবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডিমলা উপজেলায় প্রায় ২০ জন সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাওয়া যায়নি।
৩) ইটনা উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম এবং হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ নেই।
৪) আবেদন ফরম-১ এর ৯ নম্বর ফিল্ডে তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই এবং তহবিলের উৎসের বিবরণীতেও তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
৫) নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নেই।
৬) দলের গঠনতন্ত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৯০(১)(খ)(ঈ) অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে, জেলা কমিটির সদস্যদের প্রস্তুত করা তালিকা থেকে কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক বিবেচনাপূর্বক প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিধান রাখা হয়নি।
৭) দলটির কোনো দলিল বা কার্যক্রম সংবিধান পরিপন্থী নয় এবং Bangladesh Collaborator (Special Tribunals) Order, 1972 এবং International Crimes (Tribunals) Act, 1972 এর অধীন দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি দলে নেই মর্মে দলের প্রধানের ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করা হয়নি।
৮) দলের গঠনতন্ত্র গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০(১)(খ) ও ৯০(১) এর বিধান অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় সংশোধিত গঠনতন্ত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে।
৯) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০ক, ১০২, ১০গ ও ৯০(২), রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৪, ৫ ও ৬, এবং ফরম পূরণের নির্দেশিকার শর্ত পূরণের জন্য আবেদনের ত্রুটি সংশোধন করে প্রমাণপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ত্রুটিগুলো সংশোধন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করা হলে, নির্বাচন কমিশন দলটির কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা/থানা দপ্তরগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, প্রাথমিক বাছাই শেষে দলগুলোকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তাদের ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২২ জুন পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন জমা দিয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারায় সব দলকে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কমিটি, ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া, পূর্বে সংসদ সদস্য থাকা বা আগের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পাওয়া দলও নিবন্ধনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়, কমিশন প্রথমে দলগুলোর আবেদন প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর দলগুলোর দেওয়া তথ্যাবলী সরেজমিনে তদন্ত করে। সবশেষে, দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হয়। আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে না।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। দলগুলো হলো: জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর