
বরগুনার পাথরঘাটায় নিষিদ্ধ আকাশমণি রোপণের অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগের বিরুদ্ধে। সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের রূপধন এলাকায় বেড়িবাঁধে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে এ চারা রোপণ করা হয়েছে।
বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, নার্সারিতে অসংখ্য আকাশমণি চারা। নিষিদ্ধ চারাগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করছেন কর্মীরা। যদিও রেঞ্জ কর্মকর্তা আজাদুল ইসলাম সরকারের নির্দেশনার নিষিদ্ধের বিষয়টি স্বীকার করলেও বাস্তবে তার দপ্তর থেকেই লাগানো হচ্ছে আকাশমণি গাছ। রেঞ্জ কর্মকর্তা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করলেও দায় চাপিয়ে দেন শ্রমিকদের উপরে।
প্রথমে আকাশমণির চারা উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৮ সালে। নিষেধাজ্ঞা না মেনে প্রায় দেড় যুগ ধরে চলছে আকাশমণির উৎপাদন ও বিপণন। একই সঙ্গে সামাজিক বনায়নের নামে বঙ্গোপসাগরের তীরে বরগুনার পাথরঘাটায় আকাশমণি রোপণ করা হচ্ছে। পরে আবার এ বছরের ১৫ মে আকাশমণি রোপণ নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারপরও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই চারা রোপণ ও বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। গত দু'দিন নার্সারি থেকে চারা ট্রাকযোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত রবিবার দুপুরের পর নীল রঙের একটি ট্রাকে করে আকাশমণিগাছের চারা সরানোর কাজ শুরু হয়।
পাথরঘাটা বন বিভাগের সম্প্রতি বদলি হওয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে আকাশমণি চারা উৎপাদনে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তাই দ্রুত বর্ধনশীল ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন আকাশমণির চারা তৈরি করা হয়েছিল।’
পাথরঘাটা বন বিভাগের সদ্য যোগদানকৃত রেঞ্জ কর্মকর্তা আজাদুল কবির বলেন, ‘আকাশমণি উৎপাদন, রোপণ ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। তার আগেই প্রায় ৩০ হাজার আকাশমণির চারা তৈরি করা হয়েছে। রূপধন এলাকায় সামাজিক বনায়নের কাজ শুক্রবার শুরু হয়েছে। সাধারণত আকাশমণি রোপণ করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকায় আমরা অনেকটাই বিপাকে পড়েছি। শ্রমিকরা ভুল করে শতাধিক আকাশমণি চারা নার্সারি থেকে ট্রাকে তুলেছিল। তখন শুভ নামের এক সাংবাদিক ছবি তোলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো নামিয়ে রেখেছি। তাঁর সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করিনি।’
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) বরগুনা সমন্বয়ক সাংবাদিক মুশফিক আরিফ বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রকাশ্যে আকাশমণি গাছ রোপণ করছে। এ গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জেনেও বনবিভাগ এমন দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ চারা রোপণের বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বনবিভাগ চারা রোপণ করেছে এটা সম্পূর্ণ দায়বদ্ধতা তাদের।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পর বন বিভাগে থাকা আকাশমণির ব্যাপারে নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই আকাশমণি নার্সারিতেই থাকবে।’ নতুন করে চারা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নার্সারিতে থাকা চারাগুলো রোপণ করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সর্বশেষ খবর