
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে একটি সড়ক নির্মাণের প্রথম মাসেই বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে "সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের" আওতায় ৩২৮ মিটার সড়কের একাধিক স্থান দেবে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ ও দায়িত্বরত কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করেই সড়কটির কাজ করায় মাস না পেরোতেই সড়কটি ধসে গেছে।
এই অবস্থা উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের ভায়া ভক্তপাড়া সড়কের। এদিকে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারি সংস্থার জামানতের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হামলাপোলা ব্রিজ ভায়া ভক্তপাড়া পর্যন্ত ৩২৮ মিটার সড়কটি মাটি ভরাটসহ পাকা সড়ক নির্মাণের কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর এন্টারপ্রাইজ। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৬ শত ৬৪ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি সংস্থা ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের শিডিউল মোতাবেক কাজটি সুন্দর করে করার জন্য অনুরোধ করলে সে কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো তারা এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক এই পাকা সড়কটি বিভিন্ন জায়গা ধসে গেছে। সড়কের শোল্ডারে মাটি ভরাটের জন্য প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও মাটি না দেওয়ায় সড়কের অনেক জায়গায় ভেঙে ভেতরের ইটের খোয়া বের হয়ে গেছে। ফলে সড়কটি সরু হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে বলে এলাকাবাসীরা জানান।
এ ব্যাপারে জালাল খাঁ, বলাই প্রামাণিক, মানিক খান, কামাল খান, বাবুল আক্তারসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করায় কয়েক দফায় বারণ করা হয়েছে তাদের, কিন্তু কিছু বললেই ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তারা। এরপর ঠিকাদারি সংস্থা তাড়াহুড়ো করে কোনো রকমে কাজটি শেষ করেন। এই সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদার খরচ কমাতে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করেছেন। সড়কের দুই পাশে (শোল্ডারে) মাটি ধরা থাকলেও সেখানে মাটির পরিবর্তে নামমাত্র বালু দেওয়া হয়েছে। সড়কে বালু-খোয়া দিয়ে ভরাটের পর সড়কটি মজবুত করতে রোলার দিয়ে পেটানোর নিয়ম রয়েছে। এরপর কিছু সময় নিয়ে পরে পাকা (কার্পেটিং) করতে হয়। কিন্তু ওই ঠিকাদারি সংস্থা নিয়মের তোয়াক্কা না করে সময় না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পাকাকরণের কাজ করেছে। তারা আরও জানান, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও সঠিক পরিকল্পনাহীন কাজ করায় নির্মাণে মাত্র ১ মাসেই সড়কটি এই অবস্থায়। সঠিকভাবে মানসম্মত সামগ্রী দিয়ে কাজ করলে এমন হতো না। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানান এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এ. এইচ. এম. কামরুল হাসান রনী বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সড়কটি ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানতের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। সড়ক মেরামত না করলে ঠিকাদারের লাইসেন্সের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ খবর