
নবীগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ জোড়া খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশংসায় ভাসছেন হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ফলে অশান্ত নবীগঞ্জ ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে উঠেছে এবং জনজীবনে ফিরে এসেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস।
নবীগঞ্জে জোড়া খুনের ঘটনাটি দুজন গণমাধ্যমকর্মীর বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। এলাকাভিত্তিক দুটি সম্প্রদায়ের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের মধ্যে নবীগঞ্জের কয়েকটি গ্রামের মানুষ জড়িয়ে পড়েছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সংঘটিত এ সংঘাতে দুজন প্রাণ হারান এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষকালে শহরে ৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জন সাংবাদিক এবং প্রায় ১০ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে।
উক্ত ঘটনাটি আপসে মীমাংসা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সালিশ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। উক্ত কমিটি দুই দফায় মিটিং করে বিচারের কাঠামো ঠিক করেছে। উভয় পক্ষ সালিশি প্রক্রিয়া মেনে নিতে রাজি হয়েছে। সালিশ কমিটি বিচারের মাধ্যমে সমাধান করার জন্য উভয় পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা নির্ধারিত সালিশের কাছে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আতঙ্কিত নবীগঞ্জের মানুষ এখন ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ তাদের কর্মস্থলে ফিরে কাজ করছেন। সবকিছু এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই দুই সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা ও সেলিম তালুকদারের ব্যক্তিগত বিরোধ ও মারপিটকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জ শহরে দুটি গ্রাম আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুপক্ষের দুজন নিহত এবং একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালসহ অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি। নবীগঞ্জ বাজারসহ আশপাশের সাত-আটটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছিল।
এই ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা প্রথম দায়ের করে। ওই মামলা দায়েরের পরপরই সালিশি প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং শহরের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। পুলিশ ধরপাকড় বাদ দিয়ে সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সালিশি প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দেয়। একপর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে একটি শক্তিশালী সালিশ বোর্ড গঠিত হয়। গতকাল বুধবার সালিশি বোর্ড তাদের দ্বিতীয় বৈঠকে বিচারের কাঠামো গঠন করেছে। শিগগিরই সালিশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
নবীগঞ্জ সালিশ কমিটির উপদেষ্টা সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ শাহজাহান আলী বলেন, "আমরা বিষয়টি সালিশির মাধ্যমে শেষ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এত বড় বিষয়টি সমাধান করতে প্রশাসনের সকল ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি সমাধানে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ নবীগঞ্জ প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমানে সালিশির মাধ্যমে নবীগঞ্জে সম্প্রীতি ফিরে আসবে, উভয় পক্ষকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হবে।" তিনি আরও বলেন, "আমরা উভয় পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা জমা রেখে বিচারে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এ.এন.এম. সাজেদুর রহমান বলেন, "আমরা নবীগঞ্জের দাঙ্গা দমনে এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা গ্রহণ করেছি। অপরাধী যেই হোক, তার ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছি। কে কোন দল বা কোন সংগঠনের, সেটা না দেখে আমরা দেখব যাতে কোনো নিরপরাধ মানুষ এই ঘটনায় হয়রানির শিকার না হন। ভুল তথ্য দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি যারা করতে চায়, তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এলাকার সালিশ প্রক্রিয়া হলে আইনের মধ্যে থেকে সহযোগিতা করা হবে।"
সর্বশেষ খবর