
নবীগঞ্জে ভয়াবহ সংঘর্ষে শতাধিক আহত ও দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। গত ২২ জুলাই রাত সাড়ে ৩টায় সর্বশেষ মামলাটি নবীগঞ্জ থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। এসব মামলায় নবীগঞ্জের মিডিয়া জগতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের মধ্যে দেখা দিয়েছে নেতৃত্বশূন্যতা। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জন সাংবাদিককে এখন পর্যন্ত মামলার আসামি করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর কখনও এত সাংবাদিক একসঙ্গে মামলার আসামি হননি। অনেক সাংবাদিকের নামে একাধিক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। নাম উল্লেখ ছাড়াও আরও অনেক সাংবাদিক গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। অভিজ্ঞজনদের মতে, ব্যক্তিগত রেষারেষি ও সংবাদসংক্রান্ত বিষয় থেকে বেশিরভাগ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।
এখন যারা মামলার আসামি হয়েছেন, ৯ জুলাই পুলিশ অ্যাসল্ট ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামি করা হয়েছে দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া তালুকদার, সাবেক সহ-সভাপতি আশাইদ আলী আশা, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক আলমগীর মিয়া, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য মো. নাবেদ মিয়া, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম নাহিদ ও বাদল আহমদ।
১২ জুলাই তিমিরপুর গ্রামের ফারুক মিয়া হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৯ সাংবাদিককে। তারা হলেন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি এটিএম সালাম, সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিঠু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়া, সাবেক সহ-সভাপতি আশাইদ আলী আশা, বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য অলিউর রহমান অলি, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য মো. নাবেদ মিয়া, মো. আলাল মিয়া, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম নাহিদ ও বাদল আহমদ।
গত ১৬ জুলাই ইউনাইটেড হাসপাতাল ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন হাসপাতালের পরিচালক মাহবুবুল আলম সুমন। এই মামলায় তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়। তারা হলেন, দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিম তালুকদার, দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার জাবেদ ইকবাল তালুকদার।
এছাড়া সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাতে আনমনু গ্রামের রিমন হত্যা মামলায় আরও ৫ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি এম এ বাছিত, দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিম মিয়া তালুকদার, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সনি আহমদ চৌধুরী, ও দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার জাবেদ ইকবাল তালুকদার।
গত ১৬ জুলাই নবীগঞ্জে ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সংঘবদ্ধ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাবির আহমদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ৩৯ জনের নাম উল্লেখ এবং ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে হেলমেট পরিহিত একটি দল বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন ও নগদ টাকা ছিনতাই করেছে। মামলার সঙ্গে সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ জমা করা হয়েছে। উক্ত মামলায় আরও তিনজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিম তালুকদার, দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার জাবেদ ইকবাল তালুকদার।
গত ২২ জুলাই নবীগঞ্জের মাছ ও শুঁটকির আড়তে সংঘবদ্ধ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চুরির ঘটনায় নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাবির আহমদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ১১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ৫০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মাছ ও শুঁটকির আড়তে ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন, নগদ টাকা ছিনতাই ও চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। নবীগঞ্জ থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে (মামলা নং ১৮/১৬৫, তারিখ ২২/০৭/২০২৫)। মামলার বাদী হলেন নবীগঞ্জ মাছ ও শুঁটকির আড়তদার মো. জুয়েল মিয়া। এ মামলার মধ্যে তিনজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সনি আহমদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার প্রকাশক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম তালুকদার এবং স্টাফ রিপোর্টার জাবেদ ইকবাল তালুকদার।
এছাড়াও এসব মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা আসামি থাকায় অনেক সাংবাদিক তীব্র আতঙ্কে ভুগছেন। এসব সাংবাদিকদের মধ্যে দু-একজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলেও বেশিরভাগ আসামি হয়েছেন প্রতিহিংসার শিকার হয়ে। নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি এটিএম সালাম বলেন, "আমাদের প্রেসক্লাবের দুই সাংবাদিকের বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারি হয়েছে। এখন গণহারে সাংবাদিকদের আসামি করার জন্য নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব। বিষয়টি প্রশাসনের সু-নজর দেওয়া জরুরি। এর মধ্যে অনেক নিরপরাধ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, যারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না।"
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর