
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের পকেট গেট বন্ধ থাকায় হাজারো রোগী ও তাঁদের স্বজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দ্রুত গেট খুলে দেওয়ার দাবিতে ভুক্তভোগী রোগী ও বুড়িগঙ্গায় খেয়া পারাপারের মাঝিরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মিটফোর্ড হাসপাতালের নৌকা ঘাটে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় নিয়ে নৌকা মাঝি ও রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। তাঁদের দাবি, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এই পকেট গেট দিয়ে কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহারসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজারো রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে যাতায়াত করেন। বিগত করোনাভাইরাস মহামারির সময়েও হাসপাতালের এই গেটটি বন্ধ করা হয়নি। ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তার ফুটপাতের দোকানপাট ও সমস্ত পকেট গেট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফুটপাতের দোকানপাট পুনরায় আবার বসলেও পকেট গেটটি খুলে দেওয়া হয়নি, এতে হাজারো রোগী ও তাঁদের স্বজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, রোগীদের চলাচলের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে পকেট গেটটি দ্রুত খুলে দেবে কর্তৃপক্ষ।
খেয়া নৌকার মাঝি আবুল হোসেন (৬৮), যিনি গত ৪০ বছর ধরে বটতলা ঘাট থেকে মিটফোর্ড ইমার্জেন্সি ঘাটে নৌকা চালিয়ে আসছেন, বলেন, "স্বাধীনতার পর থেকে হাসপাতালের এই গেট কোনোদিন বন্ধ হতে দেখিনি। চলতি সপ্তাহের শনিবার সাপে কাটা এক রোগীকে বটতলা ঘাট দিয়ে নৌকায় করে হাসপাতাল ঘাটে নিয়ে আসি। গেট বন্ধ থাকায় তাঁরা দেয়াল টপকে হাসপাতালের ভেতরে গিয়েছিল। আমি নিজে রোগীকে দেয়াল টপকাতে সাহায্য করেছি।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটফোর্ড ইমার্জেন্সি ঘাটে প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রেতা জানান, গত বৃহস্পতিবার দেড় বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে যায়। পরে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে স্বজনরা এই ঘাট হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন গেট বন্ধ। তাঁরা জানতেন না যে এই গেটটি বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ। শিশুটি জরুরি অবস্থার রোগী ছিল, তাই তাঁরা শিশুটিকে কোলে নিয়ে গেটের পাশের দেয়াল টপকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে সহায়তা করেন। তিনি শুনেছেন, চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মর্জিনা বেগম তাঁর নাতি মিরাজকে নিয়ে নদী পার হয়ে হাসপাতালে এসে গেট বন্ধ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমি ডায়াবেটিসের রোগী। নৌকায় করে পার হয়ে এসেছি। এসে দেখি গেট বন্ধ। দাঁড়িয়ে থেকে শরীর আরও খারাপ লাগছে। এভাবে রোগীদের কষ্ট দিয়ে হাসপাতাল চলে কীভাবে? বাবুবাজার ব্রিজের ওপর জ্যামের কারণে আমরা এই ঘাট হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতাম, এখন দেখি সেটাও বন্ধ।"
একই ধরনের দুর্ভোগে পড়েছেন মো. ইমরান শেখ (৩৬)। তিনি তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, "বাবা হাঁটতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে নৌকায় করে আনলাম। কিন্তু গেট বন্ধ দেখে রিকশা খুঁজে অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে নিয়ে যেতে হলো। কর্তৃপক্ষ কি জানে না কত রোগী এই ঘাট দিয়ে আসে? জনগণের স্বার্থে দ্রুত গেটটি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।"
এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল ইসলাম খান আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও তিনি জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলনের মুখে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ আলোচনার মাধ্যমে পকেট গেটগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু এই গেট দিয়ে অনেক রোগী ও তাঁদের স্বজনরা চলাচল করেন, তাই জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে গেটটি খুলে দেওয়ার জন্য সকলের সাথে আলাপ করতে হবে। খুব দ্রুতই হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ খবর