
গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাকশ্রমিক স্ত্রী মারুফা আক্তারকে (৪৫) হত্যার পর মরদেহ ঘরের মেঝেতে রেখে আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে পালিয়েছে স্বামী মিজানুর রহমান। নিহতের ছোট বোন কুলছুম আক্তারের অভিযোগ, হত্যার ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য স্বামী ঘরের আসবাবপত্রে আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে।
রবিবার (৩ আগস্ট) ভোর তিনটার দিকে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
পোশাকশ্রমিক মারুফা আক্তার ইন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মোনতাজ উদ্দিনের মেয়ে এবং একই গ্রামের ফার্মেসি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী। অভিযুক্ত মিজানুর রহমান একই গ্রামের সুলতান উদ্দিনের ছেলে। ঘটনার পর থেকে মিজান পলাতক। এটি তাদের দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে। উভয়ের আগের ঘরে দুটি করে সন্তান রয়েছে।
মারুফা আক্তারের মেয়ে নাজমা আক্তার বলেন, "আমার মা প্রায় ২০ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। প্রবাস থেকে ফেরার পর মিজান আমার মাকে বিয়ে করার জন্য উত্ত্যক্ত করত। তখন আমি মিজানকে বলেছিলাম, 'আপনি আমার মাকে উত্ত্যক্ত করেন কেন? আমার মা বিয়ে বসবে না।' তখন সে বলত, 'তোর মা বিয়ে না বসলে তোকেও হত্যা করব এবং তোর মাকেও হত্যা করব'।"
তিনি আরও বলেন, "একপর্যায়ে পরে বাধ্য হয়ে গত প্রায় তিন বছর আগে মিজানুর রহমান আমার মাকে মিথ্যা কাবিন সাজিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর মা যখন জানতে পারে তার সাথে প্রতারণা করেছে, পরে মার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে মাকে কাবিন করে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে টাকার জন্য প্রায়ই মাকে নির্যাতন ও মারধর করত মিজান।"
নাজমা জানান, "শনিবার (২ আগস্ট) রাতে আমার মার ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাই। পরে মিজানকে বলি, 'বাড়িতে গিয়ে দেখার জন্য আমার মার ফোন বন্ধ কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে কি না।' সে বলে, 'তোমাদের ঘরে তালা দেওয়া, তোমার মা বাড়িতে নেই।' গত প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে আমার মার সাথে কথা বলেছিলাম। তখন মা বলেছিল, 'মিজান আমাকে বাঁচতে দিবে না, আমাকে অনেক মারধর করে, খুব নির্যাতন করে, তোরা আমাকে বাঁচা।' তখন মাকে বলেছিলাম, 'তুমি থানায় গিয়ে একটা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অথবা মামলা করো।' তখন মা বলে, 'আমি বাড়ি থেকে বের হলেই মিজান আমাকে মেরে ফেলবে। সে আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। আমাকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখে'।"
নিহত মারুফার ছোট বোন কুলছুম আক্তার জানান, মিজানুর রহমান তার বোন মারুফা আক্তারকে তিন বছর আগে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। মারুফা স্থানীয় মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন। বেতনের টাকা স্বামীকে না দিলে তাকে প্রায়ই মারধর করত মিজান। গত এক সপ্তাহ যাবত মারুফাকে তার স্বামী ঘরের ভিতর তালা দিয়ে রাখত। তাকে কোথাও বের হতে দিত না, কারো সাথে কথা বলতে দিত না। জিজ্ঞাসা করলে বলত মারুফা বাসায় নেই। তিনি দাবি করেন, ঘটনার ৩-৪ দিন আগে মারুফাকে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখে। রবিবার (৩ আগস্ট) ভোর তিনটার দিকে ঘরের আসবাবপত্রে আগুন দিয়ে বাইরে থেকে ঘরে তালা দিয়ে স্বামী মিজানুর রহমান পালিয়ে যায়। হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য তার স্বামী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে হত্যার পর আসবাবপত্রে আগুন লাগিয়ে মারুফা নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করছিল।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, "পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পোশাকশ্রমিক ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। সুরতহালের প্রতিবেদনে ধারণা করা হচ্ছে, মিজানুর রহমান তার স্ত্রীকে মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে লাশ ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখে। পরে ঘটনাকে ভিন্ন দিকে ডাইভার্ট করার জন্য ঘরে আগুন দিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে সে পালিয়ে যায়।"
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর