
`জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ পূর্তির দিনে হঠাৎ করেই কক্সবাজারে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতা। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে তারা ইনানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ওঠার পরই শুরু হয় নানা গুঞ্জন। গুঞ্জনের কেন্দ্রে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বলা হচ্ছে, তিনিই ছিলেন বৈঠকের অতিথি। যদিও এনসিপির নেতারা বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন।
গোয়েন্দা সূত্র ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য মতে, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও তার স্ত্রী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা এবং তাঁর স্বামী এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহসহ মোট ছয়জন ছিলেন এই সফরে।
তারা মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে কক্সবাজার পৌঁছান। বিমানবন্দরে তারা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে বের হন এবং সরাসরি ইনানীর হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্টে ওঠেন।
সারাদিনজুড়ে কক্সবাজারজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে- পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপির গোপন বৈঠক। গোয়েন্দা সূত্রগুলো ইঙ্গিত দেয়, সী পার্ল হোটেলে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন এবং এনসিপি নেতারা সেখানে তার সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। যদিও বিষয়টি যাচাইযোগ্যভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘পিটার হাসের সঙ্গে আমাদের কোনো মিটিং হয়নি। এটি সম্পূর্ণ গুজব ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন এবং একসঙ্গে বেড়াতে এসেছেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, তারা কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এখানে নেই।’
জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফ উদ্দিন শাহিনও সাংবাদিকদের বলেন, ‘সী পার্ল হোটেলে পিটার হাস নেই। সেখানে বর্তমানে মাত্র তিনজন বিদেশি অবস্থান করছেন, এবং তারা সবাই চীনা নাগরিক।’
সী পার্লের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের হোটেলের তিনটি রুমে এনসিপি নেতারা অবস্থান করছেন। পিটার হাস নামে কেউ আমাদের হোটেলে অবস্থান করছেন না।’
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। তবে হোটেল সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় উখিয়া উপজেলা ও জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন। তারা এনসিপি নেতাদের উপস্থিতি ও সম্ভাব্য বিদেশি বৈঠককে ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে এনসিপির শীর্ষ নেতারা হঠাৎ কক্সবাজারে এসে শহর থেকে বহু দূরের একটি হোটেলে উঠেছেন—এটি সন্দেহজনক। গুঞ্জন আছে তারা বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার।’
গত বছরের ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ভাষায় দিনটি ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’। ওই দিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনসিপি নেতারা সেই স্মরণীয় দিনে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন এবং তাদের এই সফর ও সম্ভাব্য বৈঠককে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠক হয়েছিল কি না-তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর