
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র পাঁচ শীর্ষ নেতা কক্সবাজার সফর শেষে বুধবার দুপুরে ইনানীর একটি অভিজাত হোটেল ত্যাগ করেছেন। সাদা রঙের একটি ভিআইপি গাড়িতে করে তাঁরা বেরিয়ে যান বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তবে তাঁরা সড়কপথে নাকি আকাশপথে কক্সবাজার ছেড়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবে এনসিপি-র শীর্ষ পাঁচ নেতা কক্সবাজারে পৌঁছান। তাঁদের এই আগমন কক্সবাজারের রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি করে। প্রশ্ন ওঠে, এই সফর নিছক অবকাশযাপন নাকি এর পেছনে কোনো কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
একাধিক সূত্রের দাবি, এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার সফরকালে বিদেশি কোনো কূটনীতিক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। যদিও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে এনসিপি নেতারা কক্সবাজার আসেন। এরপর তাঁরা ইনানীর সি পার্ল বিচ রিসোর্ট (রয়েল টিউলিপ)-এর ৫০০১, ৫০০২ ও ৫০০৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন।
এই পাঁচ নেতা হলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সার্জিস আলম, ডা. তাসমিন জারা, নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী ও খালেদ সাইফুল্লাহ। তাঁদের সফরসঙ্গীদের মধ্যে সার্জিস আলমের স্ত্রীও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই সফরে যুক্ত থাকা গাড়িচালক নুরুল আমিন বলেন, তাঁর গাড়িতে করেই এই পাঁচ নেতা ও তাঁদের দুই নারী সঙ্গী হোটেলে যান। গাড়িটি পূর্বনির্ধারিত ভাড়ায় নয়, বরং বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি হোটেলে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। তিনি আরও জানান, তাঁরা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের মতো গেট দিয়ে বের হন।
এদিকে, হোটেল সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, বিকেল তিনটা পর্যন্ত এনসিপি নেতাদের নামে কোনো ফ্লাইট বুকিং পাওয়া যায়নি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা হয়তো সড়কপথে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। একটি আলাদা সূত্র জানায়, এনসিপি-র ওই প্রতিনিধিদল সড়কপথে মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকাতেও যেতে পারে বলে গোপন তথ্য রয়েছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাত থেকেই হোটেলটিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সীমিত করা হয়। বুধবার সকালে হোটেলের আশপাশে উখিয়া উপজেলা বিএনপি ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। তাঁরা এনসিপি নেতাদের আগমন ও তাঁদের সঙ্গে সম্ভাব্য বিদেশি সংযোগকে 'রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন' হিসেবে উল্লেখ করেন।
সামগ্রিকভাবে এনসিপি নেতাদের হঠাৎ কক্সবাজার সফর, গণমাধ্যম থেকে আড়াল এবং গন্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা- সব মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলছেন, ৫ আগস্টের মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিনে, যখন ঢাকায় এনসিপি-র ‘জুলাইপত্র’ প্রকাশ ও প্রধান উপদেষ্টার একাধিক বৈঠক হচ্ছিল, তখন শীর্ষ পাঁচ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে গোপনে এসে কী করতে চেয়েছেন? অনেকের মতে, এটি নিছক অবকাশযাপন নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য, যা দেশি-বিদেশি যোগাযোগের অংশ হতে পারে।
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর