
ভারতের পণ্যে আমেরিকার বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে আমেরিকার সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ বুধবার বাড়তি এই শুল্কারোপের ঘোষণা দেন তিনি। এই বাড়তি ২৫ শতাংশ এবং আগের ২৫ শতাংশ মিলিয়ে ভারতীয় পণ্যে মার্কিন শুল্ক এখন ৫০ শতাংশ। বাড়তি এই শুল্ক ২১ দিন পর কার্যকর হবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত কয়েক দিন ধরে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে নিশানা করছে আমেরিকা। আমরা এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছি। আমাদের আমদানি আসলে বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্য অনেক দেশ জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করতে একই পদক্ষেপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও বাড়তি শুল্ক আরোপের জন্য আমেরিকা বেছে নিচ্ছে ভারতকে, যা দুর্ভাগ্যজনক। এই পদক্ষেপ অন্যায্য, অন্যায় ও অযৌক্তিক। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ভারত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
এনডিটিভি বলছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ‘শাস্তি’ হিসেবে ট্রাম্প এই নতুন বাড়তি শুল্কারোপ ঘোষণা করলেন। এর আগে সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। ১ আগস্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। ওই সময় তিনি আরও জানান, এর বাইরেও ভারতের জন্য রয়েছে ‘পেনাল্টি’। তবে সে সময় এ ব্যাপারে ট্রাম্প বিস্তারিত বলেননি।
এবার সেই পেনাল্টি হিসেবে বাড়তি এই শুল্কের ঘোষণা এল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, বুধবার এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর আগে গত সপ্তাহে ২৫ শতাংশ ঘোষণার পর ভারতের কার্যক্রম ও জবাবের জেরে এবার নতুন এই ঘোষণা এল মার্কিন প্রশাসন থেকে।
এবারের নির্বাহী আদেশে ৯টি ধারা রয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমন ঘোষণার বিভিন্ন দিক ও কারণ। এতে বলা আছে, রুশ পণ্য নিয়ে মার্কিন নীতি আসলে কী, বিশেষ করে তেল ও জ্বালানির ক্ষেত্রে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের কথাও উল্লেখ করা আছে তাতে।
নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ‘নির্বাহী আদেশ ১৪০৬৬-এ বর্ণিত জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য আমি নির্ধারণ করছি যে, ভারতের পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত। কেননা ভারত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে।’
এ ব্যাপারে আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল ভারত। বলা হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখে ভারত তার বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ বাজারে কে কত দাম নিচ্ছে, সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করে বলেই ভারত তা কিনে থাকে। কিন্তু আমেরিকার বক্তব্য, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে সেই টাকা ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে কাজে লাগাচ্ছে মস্কো। যুদ্ধে অর্থসাহায্য হচ্ছে ভারতের দেওয়া টাকায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। এখনও পূর্ব ইউরোপে দুই দেশের যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব তাদের ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ বাণিজ্য যে কারণে বড়সড় ধাক্কা খায়। সেই সময়ে রাশিয়া সস্তায় খনিজ তেল বিক্রি শুরু করে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই সময়। ভারত সারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। রাশিয়া থেকে এই মুহূর্তে ৩৫ শতাংশ তেল দিল্লি আমদানি করে থাকে। আমেরিকার লাগাতার হুমকির মুখেও এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধের কথা বলেনি দিল্লি।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর