
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রধান আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে রাজধানীর তুরাগ এবং গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে প্রধান আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপি, স্বাধীন এবং আল আমিন। তাদের মধ্যে মিজান ওরফে কেটু মিজান মহানগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার মঞ্জু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে। গ্রেপ্তারকৃতরা ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ঘটনার শুরুতে ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, যাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা, তিনি হলেন প্রধান আসামির স্ত্রী গোলাপি। এছাড়া ফুটেজে চাপাতি হাতে (দাড়িওয়ালা এবং মাথায় ক্যাপ পরা) কোপানোর জন্য যাকে দৌড়াতে দেখা যায়, সে ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান। সাদা শার্ট ও জিনসের প্যান্ট পরা চাপাতি হাতে দাঁড়ানো স্বাধীন। অপর আসামির নাম আল আমিন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)-এর অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের পরপরই স্থানীয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে। শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গোয়েন্দা (দক্ষিণ) গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে প্রধান আসামি মিজান ওরফে কেটু মিজান ও তাঁর স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেপ্তার করে। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া আল আমিনকে মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে র্যাব-এর সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে।
অন্যতম আসামি স্বাধীনকে মহানগরীর শিববাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-০১। র্যাব গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) কে. এম. এ. মামুন খান চিশতী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)-এর বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই সেলিম। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। ঘটনার পর রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা স্থানীয়ভাবে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে মহানগরীর চান্দানা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকায় গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তুহিন গাজীপুর মহানগরীর পালের মাঠ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাঁর দুই ছেলে তৌকির হোসেন তৈকি (৫) ও আবদুল্লাহ আল ফাহিম (৩)। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির গাজীপুরের ডিলার ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে নিহত সাংবাদিকের বড় ভাই সেলিম অজ্ঞাতদের আসামি করে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেমে এসেছিল শোক ও ক্ষোভের ছায়া। দ্রুত বিচার ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে সর্বস্তর থেকে।
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর