
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে ডিও লেটার (আধাসরকারি পত্র) দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ৩ আগস্ট এই পত্রটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের পথ সুগম হলো বলে মনে করা হচ্ছে। শিগগিরই এর অনুমোদন মিলবে বলেও আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকার সুধী সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন অব্যাহত রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা তাঁর দেওয়া পত্রে উল্লেখ করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ। এই জেলায় রয়েছে নয়টি উপজেলা এবং জনসংখ্যা ২৮ লাখ ৪০ হাজার ৪৯৮ জন। অতি প্রাচীনকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিক্ষা, সংস্কৃতি, কারুশিল্প, কুটিরশিল্প, খেলাধুলা সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশে সুপরিচিত।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নেই। ফলে জেলার দরিদ্র ও অসহায় জনসাধারণ বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত। জেলা সদরের স্থাপিত সদর হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতাসহ আধুনিক চিকিৎসার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। এলাকার জনসাধারণকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকা শহরে আসতে হয়। কিন্তু দরিদ্র জনসাধারণ বেসরকারি হাসপাতালে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে সক্ষম নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হলে দরিদ্র জনসাধারণ বিনামূল্যে /স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিকটবর্তী উপজেলাসমূহের জনসাধারণ নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা পাবে। অর্থ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অবস্থান ঢাকা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। জেলার ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের উভয়প্রান্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর অবস্থিত। সড়ক দুর্ঘটনা সহ অন্যান্য গুরুতর রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ঢাকা শহর ছাড়া নিকটবর্তী কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে যাতায়াত খরচসহ ঢাকা শহরে অবস্থান করে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা দুরূহ। উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ চাঁদপুর জেলা, হবিগঞ্জ জেলা, নীলফামারী জেলা, মাগুরা জেলাসহ অন্যান্য ছোট জেলা সদরে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। তিনি লেখেন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দ্বিতীয়। এই জেলা হতে লক্ষ লক্ষ দক্ষ, অদক্ষ, এবং অন্যান্য পেশাজীবী মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাকরি করছে। তাঁদের প্রেরিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রায় বাংলাদেশ সরকারের আমদানি ব্যয় অনেকাংশে মেটানো হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম তিতাস গ্যাসফিল্ড ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং আমদানি বিকল্প দেশীয় গ্যাস উৎপাদনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয় অর্থনীতিতে এক বিরাট অবদান রেখেছে।
বর্ণিত অবস্থায়, উপযুক্ত তথ্যাদির গুরুত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৌশলগত অবস্থান, ঘন জনবসতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অবদান ইত্যাদি বিষয়াদি সক্রিয়ভাবে বিবেচনাপূর্বক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়। এই সংক্রান্ত পত্রটি বৃহস্পতিবার সকালে এই প্রতিবেদকের হাতে আসে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর বলেন, ‘আমাদের জেলায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি, প্রাণের দাবি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে অর্থ উপদেষ্টার দেওয়া পত্রের বিষয়টি জেনে ভালো লাগলো। আমরা মনে করি জেলার গুরুত্ব অনুধাবন করে অতি দ্রুত এর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাবো।’
কথা হলে ঢাকাস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ খালেক বলেন, ‘আমাদের জেলায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনে যেখানে যেখানে বলার যেখানে যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন সেটা আমরা করছি। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনে অর্থ উপদেষ্টার চিঠির বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। আশা করছি এর দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। আমরা আমাদের তরফ থেকেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’
সর্বশেষ খবর